সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মানুষের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে একবার হলেও নাকে রক্তপাত হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। যদিও এটি অনেকের হয়ে থাকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি গুরুতর বিষয় নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি সিরিয়াস হয়ে থাকতে পারে এবং কিছু জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা যেতে পারে। নাকের এক পাশ অথবা উভয় পাশ দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
কখনো নাকের সামনের অংশ, আবার কখনো নাকের পেছনের অংশ থেকে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ বা গলা থেকে রক্তপাত হতে দেখা যায়।কাদের বেশি হয়?
সাধারণত বাচ্চাদের (দুই থেকে ১০ বছর বয়স) বেশি হয়ে থাকে। কারণ তারা খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে নাকে প্রায়ই ব্যথা পায় অথবা নাকের ভেতর আঙুল, কাঠি বা খেলনা দিয়ে খোঁচাতে থাকে অথবা যেকোনো ফরেন বডি (বহিরাগত পদার্থ; যেমন—খেলনার ছোট পার্টস, ব্যাটারি, শস্যদানা, ফোম, কাগজ ইত্যাদি) নাকের ভেতর দীর্ঘদিন ধরে ঢুকিয়ে রেখে দিতে পারে, যেটি আমাদের নজরের বাইরেই থেকে যায়। দ্বিতীয় গ্রুপ হচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তিরা, যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের ওপর। এই বয়সে মানুষের রক্তের ক্লটিং টাইম (রক্ত জমাট বাঁধার সময়) সাধারণত বাড়তে দেখা যায়। অনেকে হার্ট ডিজিজ বা ক্লটিং ডিজিজে ভোগেন। অনেকে রক্ত পাতলা করার জন্য এসপিরিন, ওয়ারফেরিন, ক্লপিডোগ্রেল জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি হয়। এ ছাড়া গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে রক্তনালি ফুলে যাওয়ার কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
কারণ
নাক থেকে বিভিন্ন কারণে রক্তপাত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো কারণ বের করা যায় না। একে বলা হয় ইডিওপেথিক বা অজানা কারণ। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কারণই অজানা। অন্যান্য কারণের মধ্যে লোকাল বা অন্যান্য অসুখের উপসর্গ হিসেবে রক্তপাত হতে পারে।
লোকাল/নাকের অসুখের কারণে রক্তপাত আঘাত
নাকে যেকোনো ধরনের আঘাত লাগা, নাকের অপারেশন, নাকের ভেতর আঙুল, কাঠি, কটন বাড বা অন্য কিছু দিয়ে চুলকানো, খোঁচানো বা পরিষ্কার করার কারণে রক্তপাত হতে পারে।
ইনফেকশন : ক্রনিক বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (ঘন ঘন সর্দি, হাঁচি হওয়া), একিউট/ক্রনিক সাইনোসাইটিস (সাইনাস প্রদাহ), এট্রপিক রাইনাইটিস, এডিনয়েডাইটিস (এডিনয়েড গ্রন্থির প্রদাহ), ডিপথেরিয়া, মিজেলস, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোসপরিডিওসিস।
নাকের বিভিন্ন টিউমার : সারকোমা, এনজিওফাইব্রোমা, নেজোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার, হেমাঞ্জিওমা, ইনভার্টেড পাপিলোমা।
অন্যান্য : নাকের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা (ডিএনএস), নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র।
রক্তরোগ : হিমোফিলিয়া, এপ্লাস্টিক এনিমিয়া, এথেরোস্কলেরোসিস, থ্রম্বোসাটোপেনিয়া, পারপুরা।
রক্তনালির ত্রুটি : এনিউরিজম (অস্বাভাবিক গঠনের রক্তনালি)
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : এসপিরিন, ক্লোপিডগ্রেল, হেপারিন জাতীয় রক্ত পাতলাকারী ওষুধ সেবনের কারণে নাকে রক্তপাত হতে পারে।
নাক দিয়ে রক্তপাত হলে কী করবেন?
নাক থেকে রক্ত পড়লে ঘাবড়ে যাবেন না। নাকে ছোট ছোট রক্তনালি থাকে। তাই অনেক রক্ত পড়তে পারে। রক্ত দেখেই অনেকে ঘাবড়ে যায়। ঘাবড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়।
রোগীকে প্রথমত রিলাক্স হতে হবে। রোগীকে প্রথমে চেয়ারে বসিয়ে শরীর ও মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখবেন। এরপর রোগী নিজে কিংবা না পারলে অন্য কেউ নাকের সামনের নরম অংশটি শক্ত করে দুই পাশ থেকে আঙুল দিয়ে চেপে পাঁচ মিনিট ধরে বন্ধ রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মুখটি হাঁ করে থাকবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য।
পাঁচ মিনিট পর চাপ ছেড়ে দিয়ে চেক করবেন রক্তপাত বন্ধ হয়েছে কি না! যদি বন্ধ না হয় আবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট একইভাবে চাপ দিয়ে নাক বন্ধ রাখব। এই সময়ের মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতাল বা অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করতে হবে। রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ব্লাড প্রেসার চেক করুন।
যদি রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়, কিছুদিন পর্যন্ত কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যেমন—সামনে ঝুঁকে কোনো কাজ করা যাবে না, ভারী কোনো জিনিস তোলা যাবে না, ভারী কোনো কাজ করা যাবে না, জোরে নাক ঝাড়া যাবে না, নাকে ঘষামাজা করা বা পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কখন হাসপাতালে যাবেন?
– ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয়
– রক্তের প্রবাহ বেশি হলে
– বেশি পরিমাণে রক্ত গেলে (এক কাপ সমপরিমাণ বা তারও বেশি)।
– যদি কোনো আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে রক্তপাত হয়
– যদি একাধিকবার নাকে রক্তপাত হয়
– ১০ বছরের নিচের কোনো বাচ্চার এ সমস্যা হলে
– যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্য কোনো স্থানে কোনো ধরনের পরিবর্তন টের পান। যেমন—চামড়ায় লাল, নীল বা কালো দাগ আসা, মাড়িতে রক্তপাত হওয়া, গলায়, বগলে বা কোমরে ছোট বলের মতো কিছু হওয়া বা পেট ফুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা বা জ্বর আসা।
লেখক : কনসালট্যান্ট, নাক, কান, গলা রোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল