নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে সময় বাকি মাত্র এক মাস। নিয়মানুযায়ী এখন দেশজুড়ে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নবম শ্রেণির মাত্র ৩ শতাংশ এবং অষ্টম শ্রেণির ২০ শতাংশ বই জেলা ও উপজেলায় পৌঁছেছে। এর ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির আগে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা পাবে না। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, পাঠ্যবই নিয়ে তারা কোনো শঙ্কা দেখছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পেয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আসন্ন শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই দেয়া হবে। এজন্য যথাসময়ে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ও কাগজ কেনার অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটোই দেরি করে দিয়েছে। এর ফলে মাত্র গত সপ্তাহে এই দুই শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপতে দেয়া হয়েছে। আবার ছাপতে দেয়ার পরও ছাপাখানা থেকে অষ্টমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই তুলে এনে শিক্ষা উপমন্ত্রীকে দেখাতে হয়েছে। কারণ ছাপাখানায় যাওয়ার আগে উপমন্ত্রী বই দেখেননি। তিনি বইয়ের অনেক জায়গায় সংশোধন করে দিয়েছেন। এরপর গত সপ্তাহে ফের ছাপতে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৯১ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৭৮ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। প্রাথমিক শ্রেণির অধিকাংশ বইই ছাপা ও সরাবরাহ প্রায় শেষ। জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়েই চলে যাবে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু বছর শেষ হতে আর এক মাস বাকি, এই সময়ের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হবে কী করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বলেছি তো, পাঠ্যবই নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা অন্য জায়গায়। সেই অন্য জায়গা কোনটি তা অবশ্য বলেননি তিনি। প্রেসে দেয়ার পর তুলে এনে শিক্ষা উপমন্ত্রীর পাঠ্যবই সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, স্যার এটি করেছেন। আর তিনি দেখায় ভালো হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের কয়েকটি বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির প্রায় ৯৫ ভাগ বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এই বই ছাপানো অনেক সময়ের ব্যাপার। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। এখনো পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণচুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এদিকে প্রাথমিকের মোট বইয়ের ১০ শতাংশ বই ছাপার কাজ বাকি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ১২ কোটির মতো বই ছাপানো বাকি রয়েছে। ফলে নতুন বছরের শুরুতে নবম শ্রেণিসহ বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও এনসিটিবি বলছে, সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের দুটি করে বই ছাপানো বাকি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। পহেলা জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে।
ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চুক্তি করে এনসিটিবি। অথচ এ বছরের বাকি আছে মাত্র এক মাস। এ সময়ের মধ্যে কোনো ছাপাখানাই এত বই ছাপিয়ে শেষ করতে পারবে না। টেন্ডার, কাজের চুক্তি, বিল পরিশোধ যথাসময়ে না করায় বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে এনসিটিবি।