সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
নতুন বছর, নতুন ফরম্যাট। বাংলাদেশই কেবল ‘পুরনো’ চেহারায়!
ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর নতুন বছরে ভাগ্য বদলের আশায় আজ নেপিয়ারে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু ফরম্যাট বদল হলেও ভাগ্য বদলাল না মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। ৬ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। সফরে বাংলাদেশ হারল টানা চতুর্থ ম্যাচ।
ওয়ানডের মতো আজ টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র ছিল ছন্নছাড়া। ওয়ানডে সিরিজ হতাশায় কাটানো মাহমুদউল্লাহই কেবল খুঁজে পেলেন ছন্দ। ৩০ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহর ৫২ রানের সুবাদে ২০ ওভারে কোনোমতে ১৪১ রান তুলতে পেরেছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬২ রানে ৪ উইকেট হারালেও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ৭৩ রানের সুবাদে ১২ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।
এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া ম্যাকলিন পার্কে মাঝারি পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা রুবেল হোসেন ইনিংসের তৃতীয় আর নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে এনে দেন সফলতা, তুলে নেন নেইল ব্রুমের উইকেট। যদিও এতে বড় অবদান সাকিব আল হাসানের।
রুবেলের শর্ট বল উড়িয়ে মেরেছিলেন ব্রুম। স্কয়ার লেগে একেবারে সীমানা দড়ির ওপর বলটা তালুবন্দি করেন সাকিব, কিন্তু বাউন্ডারির বাইরে চলে যাচ্ছেন ভেবে আবার বল ছুঁড়ে দেন আকাশে। দৌড়ে মাঠের ভেতর এসে আবার সেটি লুফে নেন।
নিজের প্রথম ওভারে আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমানও। এবার বাঁহাতি পেসারের বলে উইকেটকিপার নুরুল হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কলিন মানরো। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ২ উইকেটে ২৮।
এরপর দলে ফেরা কোরি অ্যান্ডারসনকে ঝড় তোলার আগেই বিদায় করেন সাকিব আল হাসান। ১১তম ওভারের প্রথম বলে সৌম্যর থ্রোয়ে টম ব্রুসকে রানআউট করেন মাশরাফি। তাতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের স্কোর যে তখন ৪ উইকেটে ৬২। তখনো জয়ের জন্য ৫৯ বলে চাই ৮১।
কিন্তু তখনো যে টিকে ছিলেন উইলিয়ামসন! শেষ ওয়ানডেতে অপরাজিত ৯৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতেই মাঠ ছেড়েছিলেন কিউই অধিনায়ক। এবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাই।
পঞ্চম উইকেটে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে সঙ্গে নিয়ে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামসন। ৫৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কিউই অধিনায়ক। ২২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন ডি গ্র্যান্ডহোম।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু এদিনও বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ম্যাট হেনরির অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে উইকেটকিপার লুক রনকিকে ক্যাচ দিয়ে ডাক মারে ফেরেন ইমরুল কায়েস।
পঞ্চম ওভারে ইমরুলের পথ ধরেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও। অভিষিক্ত বেন হুইলারের বাউন্সার বলে লং লেগে টম ব্রুসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার (১১)। বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় এর পরের ওভারে। অভিষিক্ত লোকি ফার্গুসনের ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বলেই আউট হয়ে ফেরেন সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকার।
ফুল টস বলে সাব্বির ফেরেন মিড অনে হেনরির হাতে ক্যাচ দিয়ে (১৬)। আর সৌম্য টি-টোয়েন্টি দলে ফিরে আবার ব্যর্থতার পরিচয় দেন গোল্ডেন ডাক মেরে। ফার্গুসনের ১৪৮ কিলোমিটার গতির গুড লেংথ বলে গালিতে অ্যান্ডরসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্যাসপ্রোইচের পর টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বলে ২ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন ফার্গুসন। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৩০।
পঞ্চম উইকেটে দলকে ৬৭ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। (১৪) সাকিবকে ফিরিয়ে ৩৭ রানের এ জুটি ভাঙেন ডি গ্র্যান্ডহোম। সাকিবের বিদায়ের পর মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে গতি পায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১৪ ও ১৫তম ওভারে মিচেল স্যান্টনার ও ফার্গুসনকে সীমানার ওপাড়ে আছড়ে ফেলেন তরুণ মোসাদ্দেক। পরের ওভারে তিনি স্যান্টনারের বলে অ্যান্ডারসনকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৭ বলে ২ ছক্কায় করেন ২০।
এরপর দ্রুত রান তোলার তাড়ায় মাশরাফি ১ করে ফিরলেও মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে কেবল লড়াইয়ের পুঁজিই পেয়েছিল বাংলাদেশ। জয় আর পাওয়া হলো না!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৮ (মাহমুদউল্লাহ ৫২, মোসাদ্দেক ২০, সাব্বির ১৬; ফার্গুসন ৩/৩২, হুইলার ২/২২, স্যান্টনার ১/২০)
নিউজিল্যান্ড: ১৮ ওভারে ১৪৩/৪ (উইলিয়ামসন ৭৩*, গ্র্যান্ডহোম ৪১*, অ্যান্ডারসন ১৩; মুস্তাফিজ ১/২১, সাকিব ১/৩০, রুবেল ১/৪৩)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কেন উইলিয়ামসন।
সূত্র : বাংলাট্রিবিউন