নখের যত্নে করণীয়

নখ ভালো রাখতে নিয়মিত যত্ন দরকার। হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে, অযত্ন, অবহেলা কিংবা কোনো কিছু ধরতে বা কাটতে গেলেও অনেক সময় নখ নষ্ট হয়। সৌন্দর্যের বড় একটি অংশ নখ বলে নিয়মিত নখের খেয়াল রাখতে হবে। বিন্দিয়া বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন আতিফ আতাউর।

করোনার দীর্ঘ ছুটিতে গ্রামে নানুবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম। গ্রামের টানা বৃষ্টি আর কাদায় খুশিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বর্ষার পানিতে নেমে সাঁতারও শিখে নিয়েছেন। সাঁতার শেখার খুশিতে পানিতে পেয়ে বসেছিল তাকে। ছোটদের সঙ্গে বর্ষার পানিতে নেমে ছোট মাছ ধরা, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো—বাদ ছিল না কিছুই। কয়েক দিনের কাদাপানিতে হুটোপুটির ফল ভালো হয়নি লামিয়ার। পায়ের নখের চারপাশে প্রথমে সাদাটে হয়ে যায়। এরপর ব্যথা, ঘা ও চুলকানি। এক পর্যায়ে নখ দেবে যায় মাংসের মধ্যে। ঢাকায় ফিরে রীতিমতো ছোট্ট একটি অপারেশনই করতে হয়েছে তাকে। লামিয়ার মতো নানা কারণে নখ দেবে যাওয়া, নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই। আবার অনেকেই সৌন্দর্য বাড়াতে কৃত্রিম নখও ব্যবহার করেন। নখ আমাদের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে কাদাপানি এড়িয়ে চলা, আরামদায়ক জুতা ব্যবহার, সাবধানে হাঁটা ছাড়াও ম্যানিকিউর ও পেডিকিউরও করে থাকেন অনেকে।

নেইল আর্ট

নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নেইল আর্ট মেয়েদের কাছে আকর্ষণীয় এক ট্রেন্ড। বিয়ে, পার্টিসহ নানা উপলক্ষে তারা নখে নকশার আঁকিবুকি করেন। তবে নখ ভালো রাখতে নেইল আর্টে মাঝেমধ্যে বিরতি দেওয়া উচিত। নিয়মিত নেইলপলিশ ব্যবহার করবেন না। এতে নখের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেইল আর্টের সময় অবশ্যই ভালো মানের নেইলপলিশ ব্যবহার করা উচিত। সস্তা নেইলপলিশে সিসা-জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে। এতে নখ শুষ্ক হয়ে যায়।

কৃত্রিম নখের যত্ন

অনেকেই নখের সৌন্দর্যে কৃত্রিম নখ ব্যবহার করেন। বাজারেও নানা ধরনের কৃত্রিম নখ কিনতে পাওয়া যায়। আঠা দিয়ে আঙুলের নখের ওপর এই কৃত্রিম নখ আটকে দেওয়া হয়। পার্টি, ফটোশুট, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বেলায় নারীরা এমন নখ বেশি ব্যবহার করে থাকেন। বিন্দিয়া বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ

শারমিন কচি জানান, ভালো ব্র্যান্ডের কৃত্রিম নখ ব্যবহার করা উচিত। তবে তা বেশিক্ষণ পড়ে থাকা ঠিক নয়। অনুষ্ঠান থেকে ফিরেই নখগুলো যত্নসহকারে তুলে রেখে দিন। চেষ্টা করুন আপনার সত্যিকারের নখ নিয়েই সন্তষ্ট থাকার। কেননা কৃত্রিম নখ ব্যবহার করলে অসাবধানতায় তা আসল নখের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

নখ যদি দেবে যায় 

নখের চারপাশের চামড়া কুঁচকে গেলে কিংবা কিউটিকল উঠতে দেখলে হা-হুতাশ করবেন না। অনেকেই এই কিউটিকলগুলো পুরো অপসারণ করেন। এ কারণেও নখ দেবে যেতে পারে। বৃষ্টি ও কাদাপানিতে বেশি হাঁটাহাঁটির ফলেও নখ দেবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ সময় পায়ের বুড়ো আঙুলে চাপ বেশি পড়ে বলে নখ দেবে যায়। এ জন্য বৃষ্টি ও কাদায় বেশি হাঁটাহাঁটি না করাই ভালো। কাদায় হাঁটলে দ্রুত পা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। কুসম গরম পানিতে শ্যাম্পু ও লবণ মিশিয়ে নখ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ব্রাশ করে ত্বকের ময়লা ও মরা চামড়া তুলে ফেলুন। মুগদা মেডিক্যাল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জুলফিকার হোসেন খান জানালেন, নখ যাতে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। শুধু যে হোঁচট খেয়ে কিংবা কোনো দুর্ঘটনার কারণেই নখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, বরং আঁটসাঁট জুতাও নখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ জন্য আরামদায়ক জুতা পরা জরুরি। আবার এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন অসুখ ও ভিটামিন স্বল্পতার কারণেও নখের ক্ষতি হতে পারে। এ জন্য নিয়মিত নখের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

নখের সাধারণ যত্ন তেমন কঠিনও নয়। কাদাপানি এড়িয়ে চলা, পা ভিজে গেলে দ্রুত শুকনো কাপড়ে মুছে নেওয়া, নখের আর্দ্রতা রক্ষায় অলিভ ওয়েল কিংবা নারকেল তেল মাখলেও নখের উপকার হয়। কোনো কারণে নখ দেবে যাওয়া, ঘা হওয়া, পুজ কিংবা পচা রক্ত বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

নখ ভেঙে যাওয়া

আর্দ্র আবহাওয়ার কারণেও নখ শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্ক নখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ একটু চাপ কিংবা আঘাতেই নখ ভেঙে যায়। এ জন্য প্রতিদিন ৮-৯ গ্লাস পানি পান করুন। এতে শরীরের শুষ্কতার প্রভাব নখের ওপর পড়বে না। শীতের দিনে ঠাণ্ডার ভয়ে অনেকেই গরম পানিতে গোসল করেন। খেয়াল করুন গোসলের পানি যেন বেশি গরম না হয়। অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল করলে নখ জৌলুস হারাতে পারে। নখের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধে সুন্দর করে নখ কাটা দরকার। ভঙ্গুর নখ কাটার পর ফাইলার ব্যবহার না করাই ভালো। নখ সব সময় একই দিকে ফাইল করুন। অনেকের গোসলের পর নখ কাটার অভ্যাস। এটা করা যাবে না। এতে নখ সহজে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

নখের যত্নে প্রতিদিন

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই নখের সুস্থতার মূল শর্ত। নখের নিচে সহজেই ময়লা জমে যায়। ময়লা থেকে হতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন। নখের ওপরের দিক ও ভেতরের দিকের ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। আপনার একটু বাড়তি চেষ্টাই দিতে পারে সুন্দর নখের নিশ্চয়তা। প্রতিদিন বাসনকোসন ধোয়ার আগে হাতে গ্লাভস পরে নিন। নইলে নখ ভেঙে যেতে পারে। বেশিক্ষণ পানি নাড়াচাড়া করলেও নখ বিবর্ণ হয়। প্রতিদিন কাজের শেষে কুসুম গরম পানিতে পাঁচ মিনিট নখ ডুবিয়ে রাখুন। এরপর টাওয়েল দিয়ে হাত মুছে ভালো মানের কিউটিকল তেল দিয়ে নখ ম্যাসাজ করুন। চাইলে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন এ আর ক্যালসিয়াম জাতীয় পদার্থ নখ মজবুত ও ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান।

ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর

হাত ও পায়ের যত্নে নিয়মিত পার্লারে গিয়ে ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করতে পারেন। এতে হাত ও পায়ের ত্বকের পাশাপাশি নখেরও আলাদা যত্ন নেওয়া হয়। চাইলে বাড়িতেও করতে পারেন কাজটা। তবে পার্লারে দক্ষ রূপচর্চাকারী থাকেন। তাঁদের কাছেই সেবাটির সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। নখ কাটা, কিউটিকলের যত্ন, নখের আর্দ্রতা ও শুষ্কতার বিষয়ে তাঁরা ভালো সমাধান দিতে পারবেন।

সপ্তাহে একবার হাত ও পায়ের নখের যত্ন নিলে সুস্থ-সুন্দর নখ পাবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে কমপক্ষে ১৫ দিন অন্তর হাত ও পায়ের নখের যত্ন নেওয়া জরুরি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ