নওয়াজ শরীফকে অপরাধী ঘোষণা করলেন পাকিস্তানি আদালত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে বুধবার ‘ঘোষিত অপরাধী’ হিসেবে ঘোষণা করল সে দেশের উচ্চ আদালত। দু’টি দুর্নীতির মামলায় বারবার সমন পাঠানো সত্ত্বেও আদালতে উপস্থিত হননি নওয়াজ শরীফ। এভাবে আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করায় তাকে ‘ঘোষিত অপরাধী’ তকমা দেয় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। খবর এই সময়ের।

বিচারপতি আমের ফারুক ও বিচারপতি মহসিন আক্তার কয়ানির বেঞ্চে বুধবার নওয়াজ শরীফ সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। আদালত সূত্রে খবর, আল-আজিজিয়া ও অ্যাভেনফিল্ড মামলার রায়ের বিরোধিতা করে, শরীফের পক্ষ থেকে দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতেই শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল। যথারীতি নওয়াজ শরীফ অনুপস্থিত ছিলেন। যার ফলে ক্ষুব্ধ হয় ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ।

ইমরান সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় নওয়াজ শরিফকে হাইকোর্টের সমন নিয়ে অবগত করা হয়েছিল। লন্ডনে তিনি যেখানে রয়েছেন, সেখানে আদালতের নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি শরীফের লাহোরের বাসভবনেও আদালতের সমন জারি করা হয়। এরপরেও তিনি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায়, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করেই নওয়াজ শরীফকে এদিন ‘ঘোষিত অপরাধী’ ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে লন্ডনে রয়েছেন ৭০ বছর বয়সি শরীফ। ‘ইমিউন সিস্টেম ডিজঅর্ডার’ রয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। পাকিস্তানে এই অসুখের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায়, লাহোর হাইকোর্টের নির্দেশেই গত বছর তিনি লন্ডনে যান।

আদালত জানায়, শরীফের জামানতদের কাছে তাকে আদালতে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র কার্যালয় আদালতকে জানান যে শরীফ লন্ডন এবং লাহোর উভয় আদালতের তলব সম্পর্কে অবগত ছিলেন।

আদালতের সরাসরি আদেশের পরেও উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে শরীফকে অপরাধী বলে ঘোষণা করে বেঞ্চ।

আদালত তাকে চার সপ্তাহের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। যে কারণে তাকে জামিনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নওয়াজ শরীফ আর দেশে ফেরেননি। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। শরিফের মেয়ে-সহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে।

গতবছরের অক্টোবরে লন্ডনে তার আবাসস্থলে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা গ্রহণ করতে অস্বীকার করার পর আদালত তাকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন, অন্যথায় তাকে ঘোষিত অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হবে বলে জানান আদালত।

তার আবেদনকৃত দুইটি মামলা ইসলামাবাদের হাই কোর্টে শুনানির জন্য আনা হয়, আদালত নির্দেশ দেন যে যেকোনো প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বে তাকে আদালতে হাজির হতে হবে।

তিনি হাজির হতে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ তার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে, ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার বিজ্ঞাপন লন্ডন-ভিত্তিক পত্রিকায় ছাপানোর আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে, ২০১৮ সালে দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন শরীফ, কিন্তু পরবর্তীতে লন্ডন যাওয়ার আগে তিনি জামিনপ্রাপ্ত হন।

২০১৮ সালের পানামা পেপার কেলেঙ্কারীতে তার বিপক্ষে করা তিনটি দুর্নীতি মামলার মধ্যে একটিতে অনুপস্থিতির কারণে শরীফকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে একটি ঘুষ-বিরোধী আদালত। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট শরীফকে কোনো সরকারি দফতরের দায়িত্বে থাকার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এছাড়াও, তার এবং তার সন্তানদের বিরুদ্ধে পানামা পেপার কেলেঙ্কারীর ঘটনায় ঘুষের মামলা করতে আদেশ দেয়া হয়।

তার আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানি মুদ্রায় ৭০০ কোটি রুপির জামিন বন্ডে অসুস্থ নওয়াজ শরীফকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল ইমরান খান সরকার। সেইসঙ্গে আরও কিছু শর্তারোপও করা হয়। স্বভাবতই সরকারের এই শর্তে সহমত হতে পারেননি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরীফ।