রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নওহাটা ডিগ্রি কলেজে শোকজ প্রত্যাহার না করেই প্রভাষককে যোগদান

Paris
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ৭:৪৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহটা সরকারী ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পান শাহনাজ পারভিন। টানা দশ বছর চাকরি করার পর তার নিবন্ধনের সনদটি জাল ধরা পড়ে। পরে তাকে কলেজ থেকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবার না দেয়া, দুই বছর কলেজে না আসা, বেতন ফেরত না দেয়ার পরও বহাল তবিয়তে এই প্রভাষক।

তার শোকজ প্রত্যাহার করা না হলেও তিনি রীতিমত ক্লাস নিচ্ছেন, আসছেন যাচ্ছেন কলেজে। বিষয়টি নিয়ে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের মদদে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার দুই বছর পর আবারও প্রভাষক শাহনাজ পারভিন কলেজে আসার সুযোগ পেয়েছে।

জানা গেছে, প্রভাষক শাহনাজ পারভিন ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান। তিনি ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নওহটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের ৩৫ জন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ যাবতীয় সনদপত্র যাচাই-বাছাই করে রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিস।

ওই সময় নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আব্দুল খালেক। শিক্ষকদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শাহনাজ পারভিনের বিবন্ধনপত্র জাল ধরা পড়ে। পরে জেলা শিক্ষা অফিস সেই কাগজপত্র পবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে পাঠায়। পবা উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানায়।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর কলেজ কর্তৃপক্ষের একাডেমিক সভায় প্রভাষক শাহনাজ পারভিনের জাল নিবন্ধনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। প্রভাষক শাহনাজ পারভিন কেনো নিবন্ধন জালিয়াতি করে কলেজে কর্মরত ছিলেন তার জন্য কৈফিয়ত তবল করার সিদ্ধান্ত হয় একাডেমিক বোর্ডের সভায়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর প্রভাষক শাহনাজ পারভিনকে কৈফিয়ত তলব করেন। এতে বলা হয়, আপনার এনটিআরসিএ শিক্ষক সনদ যাচাই করে সঠিক পাওয়া যায়নি।

আপনি এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন জাল করে অদ্যবধি চাকরি করে আসছেন তা বিধি বর্হিভুত, কেনো আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আগামী দশ দিনের মধ্যে তার সুস্পষ্ট জবার লিখিতভাবে নিম্ন সাক্ষরকারীর নিকট জমা দেয়ার জন্য নিদের্শ দেয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের দেয়া এই কৈফিয়াত তলব প্রভাষক শাহনাজ পারভিন পেলেও কোনো জবাব দেন নি। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারী পুনরায় জবাব শোকজ নোটিশটি তার কাছে পাঠান। ১১ জানুয়ারী তিনি ওই শোকজপত্র রিসিভ করেন। তবে দ্বিতীয়বারও শোকজের জবাব দেননি প্রভাষক শাহনাজ পারভিন। এমন কি এর পর থেকে তিনি আর কলেজেও যান নি। প্রভাষক শাহনাজ পারভিন ২০০৮ সালে চতুর্থ ব্যাচে নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। তার রোল নং- ২০৩১২০৯৩।

প্রভাষক শাহনাজ পারভিনকে জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ ও শোকজের কোনো জবার না দেয়ায় পরবর্তিতে ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত টানা দশ বছরে তিনি যে বেতন ভাতা নিয়েছেন তা ফেরত দেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কলেজে না আসার পাশাপাশি বেতন ভাতার টাকাও ফেরত দেননি।

এদিকে, প্রভাষক শাহনাজ পারভিন টানা দুই বছর নওহাটা সরকারী কলেজে আসেন নাই। হঠাৎ চলতি বছরের জানুয়ারীর দিকে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কলেজে আসা যাওয়া শুরু করেন। যদিও তার শোকজ প্রত্যাহার করা হয়নি। তারপরও তিনি মৌখিক অনুমতি নিয়ে কলেজ আসছেন, ক্লাস নিচ্ছেন। এমন ঘটনায় শিক্ষকদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশ্ন, প্রভাষক শাহনাজ পারভিনকে জাল সনদে চাকরির অভিযোগে শোকজ করা হলে তার জবার তিনি দেননি, বেতনের টাকাও ফেরত দেন নি, এমন কি কলেজ কর্তৃপক্ষ তার শোকজ প্রত্যাহার করেনি। কলেজ আসার উপর নিষেধাজ্ঞাজারি থাকলেও কিভাবে তিনি কলেজে আসা যাওয়া করছেন, কিভাবে ক্লাস নিচ্ছেন। যা নিয়ে কলেজের শিক্ষকরা রীতিমত প্রশ্ন তুলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে নওহটা সরকারী কলেজের প্রভাষক শাহনাজ পারভিনের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইলে কথা বলে হলে তিনি এসব বিষয় মন্তব্য করতে চাননি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের যোগসাজসে প্রভাষক শাহনাজ পারভিন পুনরায় কলেজে আসা যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কলেজের অনস্যান্য শিক্ষকদের বাধার মুখেও অধ্যক্ষ নিজের ফায়দা লুটার জন্য শাহনাজ পারভিনের শোকজন প্রত্যাহার না করেই নিয়ম বর্হিভুতভাবে কলেজে আসা যাওয়ার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ার মো: মোস্তফা জামানের সাথে তার মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি প্রভাষক শাহনাজ পারভিনকে শোকজ করা হয়েছে কি না সেটি জানেন না মন্তব্য করে বলেন, আপনি কলেজ আসেন সামনে কথা বলবো। আমি ব্যস্ত আছি এসব বিষয় কথা বলার সময় নাই।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ সরদার জানান, জাল সনদে কিভাবে চাকরি পেলেন সেটি দেখার বিষয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদে চাকরি করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কেনো ব্যবস্থা নিলেন না সেটিও দেখার বিষয়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর