নওগাঁয় হতদরিদ্রদের ধান কেটে দিচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ :


নওগাঁয় জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মোঃ মোবারুল ইসলামের পরামর্শে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে হতদরিদ্র ও বর্গাচাষিদের ধান কেটে বাড়ি তুলে দিচ্ছেন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (১৮ মে) জেলার আত্রাই উপজেলার হাট কালু পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্ব সোনাডাঙ্গা গ্রামের মকবুল হোসেনের ২ বিঘা জমির ধান কেটে ওই কৃষকের বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রোববার (১৭ মে) মান্দা উপজেলার বুড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভারতী মন্ডল, নকুল মজুমদার, নবকুমার ও দেবেন মন্ডল নামে চার গরীব কৃষকের ৪ বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছে। একই ভাবে গত শনিবার (১৬ মে) নিয়ামতপুর সরকারি কলেজ ভাইস- প্রেন্সিপাল মমতাজ আলী মন্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বালাহৌর গ্রামের বর্গাচাষী গৌতম সরকারের ২ বিঘা জমির ধান কেটে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সকালে জেলার বদলগাছি উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হলুদ বিহার গ্রামের বর্গাচাষী আব্দুস সামাদ ফকিরের ২বিঘা জমির ধান কেটে দেয়ার মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মোঃ মোবারুল ইসলাম। এ সময় শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আফজাল হোসেনসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন। স্বেচ্ছাশ্রমের এ মহতী উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে জেলা শিক্ষা অফিসার নিজেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধান কাটেন। বদলগাছি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১২০ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এদিন স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটায় কৃষকরাও খুশি।

কৃষক আব্দুস সামাদ ফকির বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় ধান কাটার শ্রমিক সংকটে সোনার ফসল ঘরে তোলা নিয়ে খুব শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের জমির ধান কেটে দিলেন। এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। শিবপুর উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আফজাল হোসেন বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসারের পরামর্শে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা হতদরিদ্র কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি। কৃষকদের ধান যেন শ্রমিকের অভাবে মাঠে নষ্ট না হয় সে জন্য আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের ধান কেটে দিচ্ছি।

নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্যা আল বাকী বলেন, এখন আমাদের কলেজ বন্ধ তাই পড়াশোনার চাপ নেই। স্যারদের পরামর্শে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের ভাইস- প্রেন্সিপাল মমতাজ আলী মন্ডল বলেন, এর মধ্যে দিয়ে যেকোন কাজকে ছোট করে না দেখা এবং শ্রমিক সংকটের সময় কৃষকের সহায়তায় পাশে থাকার জন্যই করা হয়েছে। এর ফলে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাশ্রমে তারা এধরনের কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোবারুল ইসলাম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দশনায় সমগ্র নওগাঁ জেলায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে আমরা স্বেচ্ছায় একাজে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।

তিনি বলেন, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে আমাদের শিক্ষার্থী রয়েছে। কৃষকরা যদি সময়মত ধান ঘরে তুলতে না পারেন, তাহলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাহলে আমার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কৃষকদের বাঁচাতে এবং যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। সব কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াই হওয়া পর্যন্ত আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাঠে থাকবেন।

স/আ