নওগাঁয় জেসমিনের মৃত্যু: যুগ্মসচিব এনামুল হক নিজেই প্রতারণা মামলার আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হক নিজেই একটি প্রতারণা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে একজন নারীর দায়ের করা ওই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

গত বছর অক্টোবরে ছন্দা জোয়ারদার নামে এক নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরের কাছে মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছন্দা জোয়ারদারের দায়ের মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে তিনি ছন্দা জোয়ারদারের মামলাটিকে মিথ্যা মামলা বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

এই যুগ্মসচিবের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতেই র‌্যাব ভূমি অফিসের কর্মকর্তা সুলতানা জেসমিনকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তার মৃত্যু হয়। তিনি জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করেন। র‌্যাব তার অভিযোগের র্ভিত্তিতেই জেসমিনকে তুলে নিয়ে যায়।

এদিকে মামলা ছাড়া শুধু মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব কাউকে গ্রেফতার করতে পারে কি না জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কাউকে গ্রেফতারের এখতিয়ার র‌্যাবের আছে কি না, তাও জানতে চান আদালত।

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানির সময় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মঙ্গলবার এসব প্রশ্ন সামনে আনেন।

পাশাপাশি আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র‌্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

এছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে, সেই সংক্রান্ত তথ্য আদালতকে জানাতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি এবং সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মকর্তা সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা মামলায় বাদীর বক্তব্য ও এজাহারে দেওয়া তথ্যে ব্যাপক গরমিল ও অসংগতি পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য ও র‌্যাবের দাবির মধ্যেও বিস্তর ফারাক রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হকের জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা বেকর্ডের জন্য রাজশাহী মেট্রিপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানা পুলিশের কাছে তদবির করেন। অথচ ঠিক সেই সময়ে সুলতানা জেসমিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে আছেন।

জেসমিন যখন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন, তখন তিনি দাবি করছেন র‌্যাব কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনি থানায় মামলা করেছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আগে সরকারি অনুমোদন বা কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এনামুল হক রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মামলা দায়েরের জন্য পূর্বানুমতি নেননি বলে জানা গেছে।