‘ধূ-ধূ চরে সোনা ফলে’

শাহিনুল আশিক:


‘যৌবনে মাছ, শুকালে শাক’পদ্মার এমনই দান। এখন যৌবনহারা পদ্মা, বিস্তীর্ণ জুড়ে চর। বছরের এক তৃতীয়াংশ সময় ধূ-ধূ চর পড়ে থাকে। পদ্মা নদী ও চরের মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা একই সুতোয় গাঁথা। এই মানুষেরা ভরা পদ্মায় মাছ ধরেন, শুষ্ক চরে সোনার ফসল ফলায়।



সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়-রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থেকে বাঘা পর্যন্ত পদ্মাচরে ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলায় চাষিরা। যদিও কৃষির তিনটি মৌসুমের মধ্যে শুধু ‘রবি মৌসুম’-এ আবাদ করা সম্ভব হয়। রবি মৌসুম- ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ (কার্তিক থেকে ফাল্গুন)। এই সময়ে পদ্মায় পানি না থাকায় রবি শস্য ফলানো সম্ভব হয়। আর খরিপ-১ ও খরিপ-২ এর ফসল বন্যার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই বরি শস্যই একমাত্র ভরসা চরের মানুষের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে- রাজশাহী জেলায় কৃষি জমি রয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৮২ হেক্টর। এছাড়া রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা জুড়ে বিস্তীর্ণ চরএলাকা রয়েছে। এই চরে মসুরের ডাল, ধান, গম, শরিষা, বাদাম, পেঁয়াজ, খেশারির ডাল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। এসব ফসল চরের কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কৃষক চরে গিয়ে আবাদ করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা জানান- গত মৌসুমে (২০২০) পদ্মার চরে চাষ হওয়া ফসলের উৎপাদন হিসেবে দেখা গেছে- মসুরের ডাল- ২ হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন, গম- ৯ হাজার ৮৩৬ মেট্রিক টন, সরিষা ৫১৮ মেট্রিক টন, ধান- ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, বাদাম ৪৪৬ মেট্রিক টন, পেঁয়াজ ৭ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন।

এছাড়া এবছর (২০২১) মসুরের ডাল চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, গম ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, সরিষা ৩৫০ হেক্টর, ধান ৫৫০ হেক্টর, বাদাম ২০০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৫৭০ হেক্টর জমিতে।


পবার হরিপুরের চর মাঝাড়দিয়াড়ে ৩০ জন চর অধিবাসী কৃষকের মাঝে উন্নত জাতের বাদামের বীজ বিতরণ।

পদ্মার চরের চাষি জুলফিকার, সাজু ও সাগর জানায়, চরে ফসলে তেমন সার-কিনটাশক লাগে না। অল্প খরচেই ফসল ফলানো সম্ভব হয়। এছাড়া হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে একই ফসল চাষ হওয়ায় সুবিধাও রয়েছে সেচ দেওয়ায়। তবে গবাদি পশু মাঝে মধ্যে ফসল খায়। এনিয়ে পাহারা দিতে হয়। জুলফিকার জানান, পদ্মার চরে তাদের ৮ বিঘা জমিতে গমের আবাদ রয়েছে। এছাড়া ধান ২০ বিঘা, মসুরের ডাল ২০ বিঘা, খেশারির আবাদ রয়েছে ২০ বিঘা জমিতে।

কৃষি কর্মকর্তা উম্মে সালমা আরও জানান, ফসলের দিক দিয়ে সমতলের চেয়ে কোনো অংশই কম নয় পদ্মাচরের জমি। এখানেও বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছে কৃষক। সার-কিটনাশক তেমন লাগে না বললেই চলে। কিছু কিছু ফসলে সার-সেচ দিতে হয়।

এদিকে, বুধবার (১০ মার্চ) সকালে পবার হরিপুরের চর মাঝাড়দিয়াড়ে ৩০ জন চর অধিবাসী কৃষকের মাঝে উন্নত জাতের বাদামের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এসময় প্রত্যেক কৃষক করে ২০ কেজি করে বাদামের বীজ প্রধান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএমডিএ রাজশাহীর নিবাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান, সমাজবেসী মাহফুজা আকরাম চৌধুরী মায়া, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজভী আল হাসান মঞ্জিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- বিএমডিএ এর সহকারী প্রকৌশলী কামরুল আলম।

স/আ