ধামইরহাটের কসাই জাহাঙ্গীর এখন তরুণ প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পী

ধামইরহাট প্রতিনিধি:
নওগাঁর ধামইরহাটের কসাই জাহাঙ্গীর এখন তরুণ প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি শত অভাব অনটনের পরও নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করছেন। ইতোমধ্যে তার তিনটি গান ভিডিও ধারণ করে বাজারে আসার চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তার আশা একদিন তিনি এ পরিশ্রমের ফলাফল পাবেন।

জানা গেছে, উপজেলার উমার ইউনিয়নের অন্তর্গত দৌলতপুর গ্রামের মো.আবু তাহের এর ছেলে মো.জাহাঙ্গীর আলম। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর পরিবারের বড় সন্তান। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর জাহাঙ্গীর আলমের আর পড়াশুনা এগোয়নি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার পর বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে তাকে লেখাপড়া ছেড়ে সংসাসের হাল ধরতে হয়। সংসার বলতে শুধু নিজ বসতবাড়ী ছাড়া আর কিছুই নেই। এগার বছর বয়স থেকে সে গরুর মাংসের ব্যবসা শুরু করেন। জাহাঙ্গীর আলমের আট বছর বয়সে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রতিদিন হাট ও বাজারে গরুর মাংস বিক্রি তার একমাত্র পেশা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাংস কেনাবেচা শেষে বিকেলে দূরদূরান্তে হাটে যায় আগামী দিনের গরু কেনার জন্য। দৌলতপুর গ্রামটি এলাকায় কসাই গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ওই গ্রামের অধিকাংশই মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত। মা ছোট ভাই ও বোন কে নিয়ে জাহাঙ্গীরের জীবন যুদ্ধ শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ১৮ বছর ধরে কসাই পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রাথমিক সমাপনী পাশ করার পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীেেন এসএসসি তে ভর্তি হয়। প্রথম পর্ব পাশ করলেও অর্থের অভাবে তার চুড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া হয়নি।

ছোট বেলা থেকে জাহাঙ্গীরের সঙ্গীতের প্রতি ভিন্ন মাত্রার অনুরাগ। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর পূর্বে প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিদিন বাড়ী থেকে সাইকেল যোগে ১০ কিলোমিটার দূরে বীরগ্রাম নামকস্থানে গিয়ে সঙ্গীত শিল্পী আজাদ রহমানের নিকট গান শিখতো। ইতোমধ্যে সে ১শত ২০টি গান নিজে লিখেছেন। তার কণ্ঠ সুমধুর হলেও কসাই ব্যবসা এবং গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় কোথায় গান পরিবেশনের সুযোগ হয়নি। তবে জাতীয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কয়েকটি অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলম গান পরিবেশনের সুযোগ পায়। সেখান থেকে শিল্পী হিসেবে তার পরিচয় শুরু হয়। তার আকর্ষণীয় কণ্ঠে গান শোনার জন্য উপস্থিত দর্শকরা বার বার অনুরোধ করেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে জাহাঙ্গীর আলম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

বর্তমানে তাকে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক সঙ্গীত গুরু এমকে চৌধুরী জিন্নাহ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সে আধুনিক গান গাইতে বেশি পারদর্শি।

ইতোমধ্যে তার স্বরচিত তিনটি ভিডিও ধারণ ও রেকর্ডিং শেষে বাজারে আসার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তার কণ্ঠের করোনাকে করবো জয়,ও প্রিয়তমা রে এই বুকেতে কি আগুন জ্বেলেছো দাও নিভিয়ে,প্রিয়া এখন পিয়নের প্রেমে পড়েছে গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।