ধর্ষণের পর হত্যার শিকার সেই স্কুলছাত্রীর দাফন নিজগ্রামে

কলাবাগানে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া ‘ও’ লেভেলের সেই শিক্ষার্থীকে (১৭) কুষ্টিয়ার পিয়ার পুরের কমলাপুর ঈদগাহ ময়দানের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। সেখানে দাদা-দাদির কবরের পাশে তিনি শায়িত হবেন। ইতিমধ্যে স্কুলছাত্রীর লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ ফজর কমলাপুর ঈদগাহ ময়দান তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে  জানিয়েছেন স্কুলছাত্রীর বাবা।

এদিকে ওই শিক্ষার্থীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি তানভীর ইফতেফার দিহান (১৮) আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২ টার দিকে ভিকটিমকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাসায় নিয়ে যায়। এরপর আসামি নিজের ফাঁকা বাসায় ভিকটিমকে একা পেয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। ভিকটিমকে ধর্ষণের সময় আসামির অমানবিক কার্যকলাপের কারণে ভিকটিমের যৌনাঙ্গ ফেটে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়। ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য তাকে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই সে মারা যায়। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি সত্য বলে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া আসামি মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এর আগে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে ওই স্কুলছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ু পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।’

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাতেই ওই স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তার ‘বন্ধু’ তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আলামিন।

কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান  বলেন, গত রাতে তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) আসামি করে ছাত্রীর বাবা ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন এক তরুণ। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরকেও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে ওই ছাত্রীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ