দেশের পাম তেলের বাজার এখন ইন্দোনেশিয়ানির্ভর

একটা সময় পাম তেল বললে মালয়েশিয়ার নামই আগে আসত। রান্না ও শিল্প উৎপাদনে ব্যবহৃত দেশের বাজারের বেশির ভাগ পাম তেল আমদানি করা হতো দেশটি থেকে। তবে দেশের পাম তেলের বাজার এখন প্রায় পুরোটাই চলে গেছে ইন্দোনেশিয়ার হাতে। পাম তেলের ৯০ শতাংশের বেশি আসছে দেশটি থেকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশের বাজার হারানোর মূল কারণ দামে পার্থক্য। ইন্দোনেশিয়ার তেলে আমদানি খরচ কম হয়। অবশ্য আমদানিকারকরা বলছেন, এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে ১০ বছর আগে।

পাম তেলের বাজার হারিয়ে বাংলাদেশ থেকে কার্যালয় গুটিয়ে নিয়েছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিল (এমপিওসি)। গত বছরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের কার্যালয় বন্ধ করে ভারতে স্থানান্তর করে তারা। এখন শোনা যাচ্ছে, ভারতও রাজনৈতিক কারণে পাম অয়েল আমদানির বাজার বদল করেছে। ভারতের আমদানির বেশির ভাগ এখন আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের আগে দু-এক বছর ছাড়া নিয়মিতই ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেলের আমদানি বেড়েছে। বৃদ্ধির হার বছরে ১২ থেকে ১৬ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজার সম্প্রসারণ নীতি নেওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, এখন মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল খুব কমই আমদানি করা হয়। মূলত মালয়েশিয়ার তুলনায় ইন্দোনেশিয়ায় দাম কম। প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ ডলার পার্থক্য থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে ২০২০-২১ সালে মোট ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা পাম তেলের ৮০ শতাংশ এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং ২০ শতাংশ মালয়েশিয়া থেকে।

দেশ থেকে অধুনালুপ্ত মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের সাবেক  আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এ কে এম ফখরুল আলমের হিসাবে মালয়েশিয়া থেকে আমদানির অনুপাত আরো কম। তাঁর হিসাবে দেশে ২০২১ সালে যত পাম তেল আমদানি করা হয়েছে তার ৯২ শতাংশই করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ৮ শতাংশ আমদানি করা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে।

এ সময় মোট পাম তেল আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টন। আগের বছর দুই দেশের বাজার অনুপাত ছিল ৯০ ও ১০ শতাংশ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া তাদের বাজার প্রভাব ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি তথ্যে দেখা যায়, ২০০৬-০৭ সালে দেশে মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আসে ৮০৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বা ৪৪ শতাংশ। বিপরীতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে এক হাজার পাঁচ কোটি টাকার সমপরিমাণ বা ৫৬ শতাংশ। পরের বছর ২০০৭-০৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি করা হয় এক হাজার ১৯৪ কোটি টাকার বা ৪২ শতাংশ। ওই বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকার বা ৫২ শতাংশ।

একই সূত্রের তথ্যে দেখা যায়, ২০১০-১১ সালে মোট পাম তেলের ৮০ শতাংশ আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসে মালয়েশিয়া থেকে। এ সময় মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয় ৯৮১ কোটি টাকা সমপরিমাণের তেল। বিপরীতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার। এরপর ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে চিত্র।

রাজধানীর মতিঝিলের আমিন কোর্টে সম্প্রতি মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একে ট্রেডিং নামে অন্য দেশের একটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বাজারে ব্যবসা একেবারেই সীমিত হয়ে আসায় এখানকার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

দেশে সয়াবিন তেলের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হয় পাম তেল। সয়াবিন তেল শুধু রান্নায় ব্যবহার করা হলেও পাম তেল ব্যবহার করা হয় রান্না ও শিল্প উৎপাদনে। বেকারির বিস্কুট, কেকসহ নানা খাবার এবং সাবান, লোশনসহ নানা প্রসাধনী পণ্য তৈরিতে পাম তেল ব্যবহার করা হয়।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ