সাড়ে পাঁচ মাসে ১ হাজার ৪৩২ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত

দেশের গড় তুলনায় অর্ধেক বৃষ্টি হয় না রাজশাহীতে

শাহিনুল আশিক:


চলতি বছরের সাড়ে পাঁচ মাসে রাজশাহীতে ৯২ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। মে থেকে চলতি অক্টোবর মাসের ১৪ দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ দশমিক ৮ মিলি লিটার। যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। যেটিকে গ্লোবাল সার্কুলেশন ডিসিএম মডেলের প্রভাব বলে উল্লেখ করছেন তারা।



বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ মিলি লিটার। সেই হিসেবে রাজশাহীতে অর্ধেক বৃষ্টিপাতও হয় না। রাজশাহীতে গত ৩০ বছরের বৃষ্টিপাত গড় করা গেলে দেখা যাবে গড়ে ১ হাজার ৪০০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কখনও বৃষ্টিপাত, কখনও অনাবৃষ্টি। এটা হয়ে থাকে গ্লোবাল সার্কুলেশন ডিসিএম মডেলের প্রভাবে।


রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র ও এসএম রেজাউনুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরের মে থেকে অক্টোবর মাসে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে।

২০২০-২০২১ সালের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের এই সময়ে ৭৪ দিনে ১ হাজার ২৪৪ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময়ে ২০২০ সালে ৫১ দিনে ৯৪৩ দশমিক ৭ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনের হিসেবে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ২৩ দিন বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বৃষ্টির হিসেবে ৩০০ দশমিক ৩ মিলি লিটারের কিছু বেশি।

অবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ৪০৬ দশমিক ৪ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া এক দিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয় ২১ জুলাই। এদিন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ১১১ দশমিক ৬ মিলি লিটার। এছাড়া জুলাই মাসে ২১ দিনে ৩৩৮ দশমিক ১ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ২৭ আগস্ট। এদিন ৯২ দশমিক ৪ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। মাসজুড়ে ১৫ দিনে ৪০৬ দশমিক ৪ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় মে মাসে। এই মাসে ৬ তারিখে ৬১ দশমিক ৪ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া ১৬ দিনে ২৩৭ দশমিক ২ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, জুন মাসের ২২ দিনে ২৬২ দশমিক ৩ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া মাসটির ৩০ তারিখে সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ১ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। এদিকে, সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ দিনে ১৪৮ দশমিক ৬ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই মাসের ৬ ও ১৫ তারিখে ২৩ দশমিক ২ মিলি লিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বশেষ চলতি অক্টোবর মাসে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ২ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ তারিখে ১১ দশমিক ৬ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) ২৮ দশমিক ৮ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এসএম রেজাউনুল হক জানায়, দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ২৫ মিনিটে ১৮ দশমিক ৬ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া এই বৃষ্টিপাত চলে ৪ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মে থেকে আগস্ট চারমাসে ৯৪৩ দশমিক ৭ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছিলো আবহাওয়া অফিস। ঐই বছরে মাত্র ৫১ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। ২০২০ সালের ঐই চার মাসের মধ্যে ২১ মে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। ঐই দিন ৮১ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। যা ঐই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে আবহাওয়া অফিস জানায়। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২০ জুলাই। ঐই দিন ৭৭ দশমিক ১ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১৮ জুলাই। ঐই দিন ৫৫ দশমিক ৮ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গত বছরের (২০২০) মে মাসে মাত্র ৮ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এ সময় ১৫৮ দশমিক ৫ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। জুন মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২১৩ মিলি লিটার। এ মাসে ১৩ দিন বৃষ্টিপাত হয়। এই মাসের ১৮ তারিখে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ৫৫ দশমিক ৮ মিলি লিটার। জুলাই মাসে ২২ দিন বৃষ্টিপাত হয়। পুরো মাসের মধ্যে ২০ তারিখে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৭৭ দশমিক ১ মিলি লিটার। এছাড়া আগস্ট মাসে ১০ দিনে ৮২ দশমিক ৬ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। আগস্টে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত প্রথম সপ্তাহে ৫৩ দশমিক ২ মিলি লিটার রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস।

রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত বিষয়ে বিশিষ্ট ভূ-বিজ্ঞানী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত হলো ২ হাজার ৫০০ মিলি লিটার। জাতীয় যে গড় বৃষ্টিপাত হয় সেই গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে রাজশাহীতে অর্ধেক বৃষ্টিপাতও হয় না। কেননা বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হয়। তবে গত দুই বছর থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টি একটু বেশি হয়েছে।

তার আগের বছরের দিকে রাজশাহীতে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছিল। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য হা-হাকার সৃষ্টি হয়েছিল। সিলেট অঞ্চলে যেমন বছরে গড়ে ৫ হাজার মিলি লিটার বৃষ্টিপাত হয়। সেই তুলনায় রাজশাহীতে গড়ে গত ৩০ বছরের বৃষ্টিপাত গড় করা যায় সেক্ষেত্রে গড়ে ১৪০০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, গ্লোবাল সার্কুলেশনের কারণে বিভিন্ন দেশে কখনো অতিবৃষ্টি আবার কখনো অনাবৃষ্টি হয়। আমাদের দেশেও তার বাইরে নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও একই হিসাব। কোথাও বৃষ্টি কম হচ্ছে। আবার কোথাও একটু বেশি। এটি গ্লোবাল সার্কুলেশন ডিসিএম মডেলের প্রভাবের হয়ে থাকে।