দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র

কৃষিপণ্যের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংস্কার এবং এ খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এর অর্থায়নে চালু হলো বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্প।

আজ বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার।

kalerkantho

“বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট” ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এর আওতাভুক্ত কৃষি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রকল্প। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক অর্থনৈতিক এবং কৃষি উন্নয়নমূলক সংস্থা Land O’Lakes Venture37 এর নেতৃত্বে একটি উন্নয়ন সহযোগী গোষ্ঠী কৃষির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশীয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের সাথে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রায় ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় সংবলিত এ প্রকল্পটি  বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশী পণ্যের বিশ্ব বাজারে প্রবেশে সহায়তা করবে এবং আমদানির ব্যয় ও সময় হ্রাসে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কুমার ঘোষ এবং বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বিল্ড এর চেয়ারপারসন ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবুল কাসেম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ প্রকল্প আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজতর ও স্বয়ংক্রিয়করণ, ঝুঁকি-ভিত্তিক পণ্য ছাড়করণ প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া ও পণ্য প্রবেশ সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুন অবহিতকরণ ও এ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, পরীক্ষাগারগুলোর পণ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া ও সক্ষমতা উন্নয়ন, এবং পচনশীল পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ সহজ করার জন্য কোল্ড-চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউএসডিএ বাংলাদেশের কৃষি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কারিগরি সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রকল্পের মাধ্যমে নেয়া কাযক্রমসমূহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় করার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি, তিনি অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের এ খাতে সহায়তা প্রদান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বর্ধিত হারে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি গরীব কৃষকদের জন্য কৃষিখাতের লাভজনক বাণিজ্যিকীকরণ বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশী কৃষি পণ্যের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এ খাতের অব্যাহত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে দেশের বাণিজ্য পদ্ধতির আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন, ঝুঁকিভিত্তিক পণ্য খালাস ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রবর্তন, এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পণ্য সংরক্ষণ অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়নে বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় সফল হবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মিলার তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য সহজীকরণ ও সম্প্রসারণ খাতে আমেরিকান জনগণের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যবসাবান্ধব বাণিজ্য পরিবেশ সৃষ্টি এবং বাংলাদেশী পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনি কাঠামো ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার নিশ্চয়তা দেন। তিনি বিশেষভাবে পচনশীল পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সহায়ক অবকাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দেশের বন্দরগুলোতে নতুন কোল্ড স্টোরেজ (হিমাগার) অবকাঠামোয় বিনিয়োগ সহজ করার ক্ষেত্রে এ প্রকল্পের সহায়তার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এ বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারি-বেসরকার খাতের প্রতি আহবান জানান।

বিল্ড এর চেয়ারপার্সন এবং এফবিসিসিআই-এর পরিচালক আবুল কাশেম খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি-খাদ্য শিল্পখাতে আইনি কাঠামো ও পদ্ধতিগত উন্নয়নের পাশাপাশি হিমাগার খাতের অবকাঠামো তৈরির যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তার সর্বোত ব্যবহারের জন্য সরকারি সংস্থাসমূহকে অনুরোধ জানান এবং বেসরকারি খাতের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।

বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন পাঁচ বছর মেয়াদি কারিগরি ও প্রযুক্তি হস্তান্তর উদ্যোগ প্রকল্প। নীতিমালা সংস্কারের পাশাপাশি এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং কৃষি ও খাদ্যশিল্প সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের কারিগরি, অবকাঠামো, এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ