দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে এবার ফেরার লড়াই (ভিডিও)

ঈদ উপলক্ষে নারীর টানে ছুটে চলা কর্মজীবী মানুষগুলো তাদের কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ।

শনিবার সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীর চাপ একটু কম থাকলেও রোববার সকাল থেকেই তা বাড়তে শুরু করেছে। যে গতিতে ঘরে ফিরেছে রোববার সকাল থেকে ঠিক সেই গতিতেই ফিরছে কর্মস্থলে। রীতিমতো ঢল শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা এরিয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার থেকে বাড়িফেরা কর্মজীবী মানুষগুলো কর্মস্থলে ফেরা শুরু করেছেন।
দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের প্রতিটি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের ভিড় দেখা গেছে। পাশাপাশি এমন চিত্রও দেখা গেছে- যারা ঈদপূর্ব ছুটি পাননি তাদের অনেকেই আবার ঈদপরবর্তী বাড়িতে ফিরছেন।

ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রী চাপ থাকলেও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। যাত্রীর কোনো ধরনের দুর্ভোগ নেই। ঘাটে পৌঁছে সহজেই ফেরি পার হতে পারছেন মানুষ। ফেরি চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে তবে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল।

ফেরিঘাটে আসা কয়েকজন যাত্রী জানালেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় সড়ক ও ফেরিঘাটে তাদের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এজন্য সেই ঝামেলা এড়াতে ঈদের দুই দিন পরই কর্মস্থলে রওনা হয়েছি।

আক্কাছ মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, পাটুরিয়া থেকে প্রাইভেটকারে গাবতলী বা নবীনগর ৫০০ টাকা। আর মোটরসাইকেলে এক হাজার টাকা। ১০০ টাকার ভাড়া এক বা দুই হাজার টাকা দিয়ে উচ্চবিত্তের লোকজন যাতায়াত করতে পারলেও নিম্নবিত্তের লোকজন বাসে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, জেলাভিত্তিক বাস চলাচলের বিষয়টি জেলা পুলিশ দেখভাল করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কর্মমুখী মানুষের চাপ থাকলেও মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট নেই। মহাসড়কজুড়ে হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সরকারের বিধি নিষেধের কারণে দূরপাল্লার বাস না চলায় সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। জেলার অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে তারা ঘাটে পৌঁছেছেন। ঘাট পার হয়ে আবারও একই কায়দায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ব্রেক জার্নিতে (ভেঙে ভেঙে)কর্মস্থলে পৌঁছতে হচ্ছে।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, মানিকগঞ্জের বারবারিয়া এলাকা পর্যন্ত ঢাকামুখী বাসগুলো চলাচল করছে। আর বারবারিয়া ব্রিজের পূর্বপাশ থেকে আবার ঢাকামুখী বাস অপেক্ষমাণ রয়েছে। যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কর্মস্থলে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ঈদের আগে ১৭টি ফেরি চলাচল করছিল। এর মধ্যে একটি ফেরি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফিরে গেছে। বর্তমানে এই নৌরুটে ছোট বড় ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। ছুটি শেষে যাত্রী ও ছোট যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়লেও পারাপারে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষ ও তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে রোববার সকাল থেকে ভিড় সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে এখনো পর্যন্ত প্রচুর ভিড় দেখা যায়। এদের অধিকাংশই ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের সংক্ষিপ্ত ছুটি শেষে রোববার হতে খুলে গেছে সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ অফিস। যে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হতে রাজধানীগামী চাকরিজীবী মানুষেরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। বাড়তি ভাড়া প্রদানসহ তারা নানা ধকল সামলে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন। তবে যাদের মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে তারা অনায়াসেই ঘাটে এসে ফেরিতে উঠে যাচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মানুষ ও গাড়ির ভিড় ক্রমেই বাড়ছে।

সরেজমিন দুপুরে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীমুখী শত শত মানুষ ফেরির উদ্দেশে আসছেন। তবে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ঘাটে বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে না। তারপরও ঘাটে একটি ফেরি ভেড়ার সাথে সাথে মানুষ গাদাগাদি করে উঠে পড়ছেন। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই।

এ সময় কথা হয় চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। এবার ঢাকায় ফিরতেও পথে পথে গাড়ি পাল্টে ফেরিঘাটে এসেছি। জানি না ঢাকা পর্যন্ত যেতে কপালে এখনো কত দুর্ভোগ বাকি আছে!

যশোর থেকে ট্রাকযোগে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছেন মোছা. রোকেয়া খাতুন নামের এক নারী। তিনি বলেন, ট্রাকের গায়ে লেখা দেখি ‘সাধারণ পরিবহন। তবে আমি আজ  থেকে বলব এটা সাধারণ না অসাধারণ পরিবহন। কেননা দূরপাল্লার পরিবহন যখন বন্ধ, তখন সাধারণ মানুষের কর্মস্থলে ফেরার অন্যতম মাধ্যম হয়েছে এই ট্রাক।’

মাগুরার গ্রামের বাড়ি হতে ফেরা ফেরদৌসী আক্তার জানান, তিনি ঢাকার একটি প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন। দীর্ঘদিন বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই ছুটি কম হলেও বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলাম। পথে পথে অনেক ধকল সহ্য করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আছি।

এ সময় পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলোতেও মানুষের ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। অল্প কিছুসংখ্যক ছিলেন কর্মস্থলমুখী।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ বলেন,  ঈদপরবর্তী যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন করতে নৌরুটে ১৬টি ফেরি সচল রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ রাজধানীর দিকে ছুটতে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীমুখী মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ছে। আগামী কয়েক দিন এ চাপ অব্যাহত থাকবে।