দুর্বল হয়ে পড়েছে করোনা : ইতালির পর দাবি মার্কিন চিকিৎসকদের

  • ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গ মেডিক্যাল সেন্টারের (ইউপিএমসি) ডা. ডোনাল্ড ইয়ালি বলেছেন, কোভিড-১৯ শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
  • তিনি বলেন, মানুষ খুব সহজেই এই ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসছে এবং মহামারির শুরুর দিকে ভাইরাসটির তীব্রতা মারাত্মক থাকলেও বর্তমানে তা কমে গেছে।
  • চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইতালির চিকিৎসকরা বলেন, ভাইরাসটির সংক্রমণের তীব্রতা ইতালিতেও কমে এসেছে।
  • তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়েছে এমন দাবির পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গ মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা বলেছেন, করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইমারজেন্সি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ডোনাল্ড ইয়ালি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবির পক্ষে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, মানুষ এখন খুব সহজেই এই ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসছেন এবং চলতি বছরের শুরুর দিকের মহামারির সময়ের আক্রান্তদের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানে আক্রান্তদের অবস্থা গুরুতর নয়। ডা. ইয়ালি বলেন, সম্ভবত ভাইরাসটি পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাইরাসটির কিছু বৈশিষ্ট্য বলছে, এর শক্তি কমেছে।

গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইউপিএমসিতে পাঁচ শতাধিক কোভিড-১৯ রোগীকে সফলভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক। ডা. ইয়ালি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভেন্টিলেটরে নেয়ার দরকার খুব কমই হয়েছে।

তিনি বলেন, ইউপিএমসিতে সব পরীক্ষার মধ্যে চার শতাংশেরও কম এবং মাত্র ০ দশমিক ২ শতাংশ অ্যাসিম্পটোম্যাটিক রোগীর পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসছে। এর মানে হচ্ছে কমিউনিটির মধ্যে এই ভাইরাসটির উপস্থিতি খুবই কম।

এর আগে ইতালির চিকিৎসকরা একই ধরনের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন যে, দেশটিতে করোনার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে দেখা গেছে। ইতালিতে মহামারির সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় মার্চ এবং এপ্রিলের করোনা নমুনার সঙ্গে বর্তমানে সংগৃহীত নমুনার বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া যায়।

ইতালিতে করোনার কেন্দ্র হয়ে ওঠা লম্বার্ডি অঞ্চলের স্যান রাফায়েলে হাসপাতালের আইসিইউয়ের প্রধান অধ্যাপক আলবার্তো জ্যাংগ্রিলো গত রোববার এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, ভাইরাসটি ইতালিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণের তীব্রতাও কমে গেছে। তবে করোনা ক্লিনিক্যালি এই অঞ্চলে নেই, সেটি এখনও বলার সময় আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইতালির চিকিৎসকদের এমন দাবির পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান। তারা করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ ধরনের দাবির পক্ষে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, সংক্রমণের দিক থেকে- ভাইরাসটি পরিবর্তন হয়নি। তীব্রতার দিক থেকেও এটির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

তবে এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস জিন বদলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বৈশিষ্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে দাবি করেন। পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবেশের সঙ্গে ভাইরাসটির মানিয়ে নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে জানিয়েছেন তারা।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানের প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির উৎপত্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে। এতে ৬৭ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েক ফরেস্ট ব্যাপ্টিস্ট মেডিক্যাল সেন্টার, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থওয়েল হেলথের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিবর্তনের ব্যাপারে তারা এখনও অবগত নন।

সূত্র: ডেইলি মেইল।