দুর্গাপুরে দুই কিশোরকে গাছে বেধে নির্যাতন করলেন ইউপি সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর দুর্গাপুরে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে ওই দুই কিশোরকে ব্যাপক নির্যাতন করেন ঝালুকা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব।

 

নির্যাতনের শিকার ওই দুই কিশোর আমগাছী সাহার বাণু উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। নির্যাতনের পর ওই দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যদের নিকট গ্রাম্য সালিশের নামে ১৬হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করেছেন তিনি।

 

ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডলের নেতৃত্বেই ওউ সালিশ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

 

ওই বৈঠক এবং দুই কিশোরকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ গোপনে ধারন করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

 
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আন্দুয়া গ্রামের ক্যাচিনি ফকিরের ছেলে রেজাউলের বাড়ি থেকে ছাগল চুরি হয়ে যায়। উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জার্জিস হোসেন ও পলাশবাড়ি গ্রামের সেকু আলীর ছেলে রতন নামের দুই কিশোর ওই ছাগলটি নিয়ে  মতিহারের হরিয়ান বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের বাজারের নাইট গার্ডরা আটক করেন।

 

পরে ওই দুই কিশোরের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আন্দুয়া গ্রামে খবর দিলে সকাল ৬টার দিকে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতলেব তাদের নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে আন্দুয়া গ্রামে যায়। এরপর বেলা ১১টার দিকে ছাগল মালিক রেজাউলের বাড়ির পাশেই গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। সালিশী বৈঠকে ওই দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়।

 

পরবর্তিতে তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়া হলে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

 

এ সময় কথিত ওই গ্রাম্য সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল, আন্দুয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব ও হাড়িয়াপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মির্জা আব্দুল লতিব।

 

পরবর্তিতে ওই দুই কিশোরকে তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ওই দুই কিশোরকে পেটানোর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকায় দিনভর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

 
নির্যাতিত ওই দুই কিশোরের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, অল্প বয়সী ওই কিশোরেরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে তাদের গাছে বেঁধে নির্মম ভাবে পেটানো কতটা যৌক্তিক ও আইনসিদ্ধ। এ ব্যাপারে তারা আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হলে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব জানান, ছাগল চুরির কথা প্রথমে তারা স্বীকার না করায় তাদের গাছে বেঁধে রাখা হয়। তবে তাদের নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। জরিমানার ১৬ হাজার টাকা কার কাছে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ হাজার ৫০০ টাকা ছাগল মালিক রেজাউলকে দেয়া হয়েছে। আর বাঁকি টাকার মধ্যে কিছু টাকা ওই দুই কিশোরকে ধরতে সহযোগীতা করেছিলেন তাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। আর কিছু টাকা গ্রামের মসজিদের উন্নয়নকল্পে দান করা হয়েছে। তবে কথিত ওই গ্রাম্য সালিশে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

 

এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার আলী মন্ডল কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

 

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আলম জানান, এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নাই। কেউ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওসি।

স/আর