দুই হিজড়াকে চাকরি দিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক

তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে তাদের জীবন-যাপনের করুণ কাহিনি শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে তাঁর দপ্তরে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। আজ শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’।

সভায় জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের একজন কম্পিউটার অপারেটর ও অপরজন অফিস সহায়ক পদে আগামী এক মার্চ থেকে তাঁর দপ্তরে মাস্টাররোলে চাকরিতে যোগ দিবেন। যতোদিন পর্যন্ত তাদের চাকরি সরকারিভাবে স্থায়ী না হবে, ততোদিন পর্যন্ত তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাসিক সম্মানী ভাতা পাবেন।’

পুলিশ বিভাগসহ অন্য প্রশাসনেও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের চাকরি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে দিনের আলো হিজড়া সংঘ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক ও কামারুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম, সহকারী কমিশনার সানিয়া বিনতে আফজল, তানিয়া আক্তার লুবনা ও মুমতাহিনা কবীর, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী, আপস এর নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার পল্টু, জাতীয় মহিলা পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি কল্পনা রায় এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী আফসানা তানজুম ইরানী।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রকৃত হিজড়াদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তৃতীয় লিঙ্গ নামধারীদের চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গ গুরুদের তালিকা তৈরি করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কারণ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে তার শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের লেখাপড়া করানোর জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। রাজশাহীর তৃতীয় লিঙ্গের জনগণের বাসস্থানের জন্য কাশিয়াডাঙ্গায় এক একর জমি অধিগ্রহণ করে বাসস্থান ও ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য সরকারের কাছে প্রকল্প পেশ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে কেউ যেতে চাইলে প্রতিটি উপজেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর দুজনকে দুটি করে ঘর দেওয়া হবে।’