দুই মাসে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী থাকা খাওয়া খরচ ২০ কোটি টাকা!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা কাজে জড়িত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও স্টাফদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত বাবদ দুই মাসে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকা ছাড় করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কভিড-১৯ এর চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়া বাবদ এক মাসে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে- এমন একটি তথ্য শনিবার বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জানা গেছে, মূলত দুই মাসের খরচ বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ-২) ভবন-২ (নতুন ভবন) পুরোটা এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের ৬০টি বেডকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে  গত ১ মে থেকে চালু করে ডিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ। এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১৫২ জন চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্টাফ এবং আনসারসহ প্রায় দুই হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়। যেহেতু এরা কভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত, তাই তাদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ডিউটিতে দেওয়া হয়। প্রতিটি গ্রুপ সাত দিন ডিউটি করে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে যায়। তারপর পরিবারের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আবার ডিউটিতে  ফেরে। এই চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্টাফদের থাকা ও খাওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি হোটেল ভাড়া করে। তাদের যাতায়াতের জন্য ভাড়া করা হয় বেশকিছু মাইক্রোবাস। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্টাফদের খাওয়া বাবদ জনপ্রতি প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের তিন খাতে মে ও জুন মাসে ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে ডিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠায়। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবটি গত সপ্তাহে অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এই হিসাবটি বেশ অস্বাভাবিক। এ জন্যই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাউকে রাখা হয়েছে রাজধানীর রিজেন্সি হোটেলে, কাউকে রাখা হয়েছে গুলশানের লেক শোর হোটেলে এবং কাউকে রাখা হয়েছে লা ভিঞ্চিতে। আর নার্স ও স্টাফদের রাখা হয়েছে নগরীর অন্যান্য হোটেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হোটেলগুলোতে যথাযথ সেবা পাওয়া যায়নি। আর যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে তাদের আনা-নেওয়ার জন্য যেসব মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছিল তার বেশিরভাগই ছিল নন-এসি। পিপিই পরে গাড়িতে বসা যেত না গরমের জন্য। তা ছাড়া গাড়ি প্রায়ই এক ট্রিপ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ট্রিপ দিত না। তখন তাদের সিএনজিতে করে যাতায়াত করতে হয়েছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কীভাবে এত টাকা খরচ হলো তার হিসাব বলছি। চিকিৎসক, নার্স, আয়া, আনসারসহ অন্যান্য স্টাফ মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার লোক কভিড- রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত। তাদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের জন্য আমরা ৩০টি হোটেল ভাড়া করেছি। গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। আমরা এনএসআই এর মাধ্যমে হোটেলের সঙ্গে চুক্তি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের প্রতিদিনের কাবারের জন্য ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানেই হিসাব করেন দুই হাজার লোকের খাবারের বিল কত আসে।’ কিন্তু হোটেলগুলোর ভাড়া এবং গাড়ির ভাড়া কত সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন