দায় এড়াতে চেয়ারম্যানের ওপর দোষ দিচ্ছে রাজশাহীতে লাশ ফেলে পালানো স্বজনরা

স্টাফ রিপোর্টার :
করোনার আক্রন্ত দুইজনের লাশ রামেক হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে স্বজনরা। স্বজনরা না আসায় রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাশ দুটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেই পড়েছিলো। এখন লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনদের দাবি লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে স্বজনদের দাবি সঠিক নয়।

মৃত দুইজন হলেন, নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আজাদ আলী (৩০) এবং রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবুর রহমান।

রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আজাদ আলী মারা যান। আর হাসপাতালের ২৯ নম্বর করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল ১০টার দিকে হাবিবুর রহমানের মৃত্যু হয়।

এদিকে আজাদ আলীর মৃত্যুর পর তার ভাই অভিযোগ করে জানায়, পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর ও গ্রামবাসী তাদের মৃত ভাইয়ের লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে মানা করেছেন। তবে রবিবার ভোর থেকে মৃতের সেই ভাই মোবাইল বন্ধ করে গাঢাকা দেয়।

আর হবিবুর রাহমানের মৃত্যুর পর তার পরিবারও হাসপাতালে থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্থানীয় রাজপাড়া থানায় জানালে তারা মৃতদের বাড়ির এলাকার থানায় যোগাযোগ করে ও তাদের ঠিকানা জোগাড় করতে সক্ষম হয়।

পত্নীতলা থানার ওসি পরিমল বাবুল সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আজাদ আলী পেশায় একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তবে তার পরিবার যে দাবি করছে তা সঠিক নয়। গ্রামে লাশ আনতে কোন বাধা নেই। লাশ দাফনের জন্য গ্রামবাসীর সহযোগীতায় পৃথক দুইটি টিম তৈরি করা আছে। এর বাইরে পুলিশেরও একটি টিম রয়েছে। আমরা ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছি, তারাই আসলে চাইছে না লাশ নিয়ে আনতে।

একই কথা জানিয়েছেন ঘোষনগর ইউনিয়নের অভিযুক্ত চেয়াম্যান আবু বকর। তিনি বলেন, আমি যদি একথা বলে থাকি তবে তারা প্রমাণ দেখাক। আমি তাদেরকে কল করেছি বা তারা আমাকে কল করেছে।


আরও পড়ুন : রামেক হাসপাতারে করোনায় মৃত রোগীর লাশ ফেলে পালালো স্বজনরা


এদিকে চারঘাট উপজেলার হবিবুর রাহমানের পরিবারের সাথে সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে থানা কর্তৃপক্ষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা রামেক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, আজাদ আলীর মৃত্যুর পর রাতেই তার লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে অবহিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা আজাদ আলীর ভাই এবং ভাবির সঙ্গে কথা বলেন। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের জানান, গ্রামে এই লাশ দাফন করতে দেয়া হবে না। কোয়ান্টাম যেন রাজশাহীতেই লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করে।


আরও পড়ুন : করোনায় মৃত চারঘাটের হাবিবুরের লাশ ফেলে পালিয়েছে স্বজনরা


সে অনুযায়ী, কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবকরা ভোর ৫টায় রাজশাহীতে কবর খনন শুরু করেন। এরপর ভোর ৬টায় আইসিইউ’র সামনে গিয়ে দেখেন মৃত ব্যক্তির ভাই এবং ভাবি সেখানে নেই। অন্য রোগীর স্বজনরা জানান, ফজরের আযানের পর তারা হাসপাতালে থেকে বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ।

অন্যদিকে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার স্বজনরা ছিলেন। তবে মৃত্যুর পর তারা লাশ ফেলে চলে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর স্বজন হিসেবে যে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছিল সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, পুলিশের মাধ্যমে দুই লাশের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তাদের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু স্বজনরা যদি কোনোভাবেই না আসেন তাহলে লাশের দায়িত্ব পুলিশকে দেয়া হবে। পুলিশ তখন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দুটি দাফনের ব্যবস্থা করবে।

স/রা