দখলে দখলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাজশাহী নগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিভাগীয় শহর রাজশাহী। পদ্মা তীরবর্তি রাজশাহী শহরটি শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিতি। পাশাপাশি সারা দেশে এমনকি বিশ্বেও রাজশাহী সবুজের নগরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বায়ু দূষণের হার রোধে এই নগরী অন্যতম হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতিও পেয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরীর পদ্মা পাড় থেকে শুরু করে, সিটি করপোরেশনের জায়গা, সরকারি জলাশয়, খাল, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা, রেলওয়ের জমি সবখানেই যেন এখন হায়েনাদের থাবা। জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ঘর-বাড়ি, দলীয় কার্যালয়, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জুয়ার আসর। এতে করে গোটা রাজশাহী যেন পরিণত হয়েছে দখলের নগরীতে। রাতারাতি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব অবৈধ স্থাপনা।

দিনের পর দিন পাকা বা আধাপাকা স্থাপনা গড়ে তুলে একের পর এক জায়গা দখলের হিড়িক অব্যাহত রয়েছে। এতে করে ক্রমেই শ্রী হারাচ্ছে শান্তির নগরী রাজশাহী। এমনকি দখলের দাপটে পায়ে হাঁটার জায়গাটিও হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। কিন্তু দখলকারীরা থাকছেন বহাল তবিয়তে।

কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে সেখানে রাতের বেলা বসছে জুয়ার আসর। কিন্তু এসব অবৈধ স্থপনাগুলো উচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ফলে দিনের পর দিন নগরীর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জায়গাগুলো দখলের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এ মাত্রা এখন আরও আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকারি সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারাও।

জানতে চাইলে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থান যেভাবে দখল হচ্ছে ইচ্ছে মতো। বিশেষ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জায়গাগুলো দখল হচ্ছে ব্যাপক হারে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নিরব হয়ে আছে সিটি করপোরেশন। এতে করে দিনের পর দিন দখলের মাত্রা বাড়ছেই। আর দখলের কারণে আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। কাজেই দখলদারদের বিবরুদ্ধে এখনোই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

দখলে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মার তীর:
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী থেকে শুরু করে একেবারে বুলনপুর পর্যন্ত পদ্মার উত্তর তীরের বিভিন্ন স্থান দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। কোথাও কোথাও নদীর ভিতরাংশ দখল করেও গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, শতাধিক বাড়ি-ঘর, সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের অফিস, ক্লাব ঘর, ফাস্ট ফুড, কফি হাউজের দোকান, গরুর খামার, পার্কসহ নানাকিছু। কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীরা, কোথাও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, কোথাও খোদ সিটি করপোরেশন, খোদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নদীর তীর দখল করে এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।

এর ফলে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর পদ্মাকে ঘিরে গড়ে উঠা শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ফলে নদী বা তার সৌন্দর্য দেখতে এসে নিরাশ হচ্ছেন মানুষ। আবার নদীর তীরবর্তি শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন গিয়ে পড়ছে পদ্মায়। এতে করেও চরমভাবে বিনিষ্ট হচ্ছে পদ্মার স্বাভাবিক পরিবেশ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মান তীরবর্তি এলাকা নগরীর বড়কুঠি থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি দখলের রাজত্ব চলছে। বড়কুঠিতে ‘কফি বার’ নামে একটি ফাস্টফুডের দোকান করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করেছে খোদ সিটি করপোরেশন। পাশেই যুবলীগকর্মী মুন্না রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন জায়গা দখল করে ফাস্টফুডের দোকানসহ কয়েকটি বাড়ি-ঘর গড়ে তোলা হয়েছে।
বড়কুঠির সামনে কিছু দূর যেতেই পদ্মার তীর দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ফাস্টফুডের ব্যবসা করে চলেছেন দরগাপাড়া এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদ হাসান। অন্তত ১৫ বছর ধরে ওই জায়গাটি পদ্মা গার্ডেন নাম দিয়ে তিনি দখলে রেখেছেন।

তবে জাহিদ হাসান দাবি করেন, সেখানে তাদের নিজস্ব কিছু সম্পত্তিও রয়েছে। তাই জায়গাটি তিনি দখল করে ফাস্টফুডের ব্যবসা করছেন।


পদ্মা গার্ডেনের সামনে পশ্চিম দিকে নদীর তীরে সিটি করপোরেশন লালন শাহ পার্ক নামে আরেকটি বিশালাকার জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিল। তবে কালের কণ্ঠে এ নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

লালন শাহ পার্কের ঠিক কয়েক গজ দূরেই নদীর তীর দখল করে শহররক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সীমান্ত নোঙ্গর’ নামে একটি ফাস্টফুড কর্ণার। বিশালকার একটি আমবাগান ঘিরে এবং নদীরও বেশকিছু এলাকা দখল করে এখানে ভবন নির্মাণ করে ওই ফাস্টফুড কর্ণারটি গড়ে তোলা হয়েছে গত ৪-৫ বছর আগে। এরপর সম্প্রতি নদীর ভিতরে গড়ে তোলা হয়েছে আরেকটি হাওয়া খানা। বর্ষাকালে যেখানে পদ্মার পানি থৈ থৈ করে।

সীমান্ত নোঙ্গর গড়ে তোলার বছর দুয়েকের মধ্যে তার পাশে পশ্চিম দিকে আরেকটি আম বাগান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বা নদীর জায়গা দখল করে শহররক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে সীমান্তে অবকাশ নামের অপর একটি ফাস্ট ফুড কর্ণার। বিশালকার এই জায়গাতেও গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী ভবন। এর জন্য একটি বিশালকার বট গাছও কেটে সাবাড় করা হয়েছে। যেনি বেড়ে উঠেছিল শহররক্ষা বাঁধের ওপরেই।

আবার সীমান্ত অবকাশ ঘেঁষে পশ্চিমে একেবারে নদীর মধ্যেকার জায়গা দখল করে সেখানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য কারা প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলারও প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ওই জায়গাটির দখল পাল্টা দখল নিয়ে সম্প্রতি বিজিবির সঙ্গে কারারক্ষীদের উত্তেজনাও দেখা দেয়।


নদী বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছু জায়গা সৌন্দর্য বর্ধন করে সেগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে করে বিনোদন পীপাশু মানুষ পদ্মা নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে বাড়তি বিনোদন পাচ্ছেন। আবার কিচু জায়গা স্থানীয়রা জোর করে দখলও করেছে। এগুলো উদ্ধার করা হবে।’

বিদ্যুতের পোলের নিচে রাস্তা দখল করে আ’লীগ কার্যালয়:
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড় এলাকায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনে বিদ্যুতের পোল ঘেঁেষ রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থানীয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে ওই কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এরপর গত কয়েকদিন আগে ওই কার্যালয়ের সামনে রাস্তা দখল করে দেওয়া হয়েছে টিনের ছাউনি। অথচ তার ওপরেই রয়েছে ৩৩ হাজার কেভি’র বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। যে লাইনের নিচ দিয়ে কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠার নিয়ম নাই।

কিন্তু সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা রেন্টু আলী, কাফি ও ভোলার নেতৃত্বে ওই জায়গাটি দখল করে সেখানে তাঁদের আড্ডা দেওয়ার জন্য কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও তার নাম দেওয়া হয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়।

তবে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, জায়গাটি দখল করা হয়েছে। কিন্তু জুয়া খেলার বিষয়টি তাদের জানা নাই।

বিদ্যুৎ বিভাগের জায়গা দখল করে আ’লীগের কার্যালয়:
রাজশাহী নগরীর কামারুজ্জামান চত্তর এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কোটি টাকা মূল্যের একটি জায়গা দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবগলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রায় চার বছর ধরে ওই জায়গাটি দখল করে রেখেছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কোনো অনুমতি না নিয়েই সেখানে ওপরে টিনের ছাউনি ও চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে নিমার্ণ করা হয়েছে একটি অফিস ঘর তৈরী করে সেখানে আড্ডা দেওয়া হয়। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস’ নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে ওই কার্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে পিডিবি’র জায়গায়।


এখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সন্ধ্যার পরে আড্ডা দেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন, সহসভাপতি মোজাফফর হোসেন, পলাশ সরকারসহ ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী। কখনো ওই অফিসের ভিতরে আবার তাঁরা কখনো অফিসের সামনে ফুটপাতে চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দেন।

ওইসময় রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এএম মাসুদ আল ফারুক বলেছিলেন, ‘আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেখানে আবারও সাবস্টেশন এবং অফিস নিমার্ণ করা হবে। তখন ওই কার্যালয়টি অপাসারণ করা হবে।’ কিন্তু সাবস্টেশন ও অফিস নির্মাণ শেষ হলেও অফিসটি আর সরানো হয়নি। ’

সওজের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে মার্কেট:
রাজশাহী নগরীর সিটি বাইপাশের খড়খড়ি এলাকায় এবং রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) র কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে বা নালা ভরাট করে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে নওদাপাড়া এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনও গড়ে উঠেছে জায়গা দখল করে। আর নগরীর খড়খড়ি এলাকায় বাইপাশের উত্তর পাশের প্রায় ৮ কাঠা জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। স্থানীয় প্রভাবশালী শামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি ওই মার্কেঠ গড়ে তুলেন।

তবে জায়গাটির কিছু অংশ নিজের বলে দাবি করে শামসুল আলম বলেন, ‘সামনের কিছু অংশ সওজের। কিন্তু মার্কেটের সামনে জলায়শয় হবে জেনে জায়গাটি ভরাট করা হয়েছে। তবে আমি সরকারি কোনো জায়গা দখল করিনি।

খাল দখল করে আ’লীগের কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
রাজশাহীর কাটাখলি বাজারের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির এখন আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া বললেই মুশকিল। গোটা খাল দখল করে একের পর এক গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর। ফলে পদ্মার পানি সরবরাহের জন্য খালটি কাটা হলেও এখন সেটি নিজেই অস্তিত্বহীনতায় ভ’গছে। একই অবস্থা নগরীর চৌদ্দপাই এলাকা দিয়ে যাওয়া আরেকটি খালেরও। এই খালটিও দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়। এটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী।

কাটাখালি বাজারের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি গণহারে দখল করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে বিশালাকার জায়গা দখল করে একটি হার্ডওয়ার দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মী বলে এলাকায় পরিচিতি। সেই দাপটে খালের ওপর পাকা দোকান ঘরটি নির্মাণ করেছেন তিনি।

তবে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শহিদুল ইসলাম বলেন, খালটিতে আর পানি থাকেন, কাজেই যে যার মতো করে দখল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।

এই খালটি রক্ষার জন্য কাটাখালি খাল কমিটির ব্যানারে বছর চারেক একবার আন্দোলনে নেমেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু প্রশাসন এগিয়ে না আসায় পরবর্তিতে ওই আন্দোলন থেকে সরে আসেন স্থানীয়রা। যাদের মধ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেলন বর্তমান পৌর মেয়র আব্বাস আলী, মুক্তাদুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, বকুল হোসেনসহ আরও অনেকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আব্বাস আলী বলেন, খালটিকে আমরা আর রক্ষা করতে পারছি না। যে যার মতো করে দখল করে নিচ্ছে। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডও নির্বাক ভূমিকা পালন করছে। সেই সুযোগে খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করে কেউ কেউ আবার সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে।’


চৌদ্দপায় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ওয়ার্ড কার্যালয় গড়ে তোলা প্রসঙ্গে কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, খালটিতে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। তাই এ কার্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে। খালটির ওপরে আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো স্থানীয়রা করেছে। তবে ওয়ার্ড কার্যালয়টি আমরা করেছি।’

জানতে চাইলে কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘খাল দখল করে ওয়ার্ড কার্যালয় করা ঠিক হয়নি। তবে আরও কিছু লোকও একই কায়দায় দখল করেছে।’

এ দুটি খাল দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়, এমন খাল দখল করে কার্যালয় গড়ে তোলা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিষয়টি এর আগে জানা ছিল না। এখন খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবো।’

এছাড়াও নগরীর বন্ধগেট এলাকায় রেলওয়ের জায়গা দখল করে তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়, তেরোখাদিয়া এলাকায় সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কার্যালয়, রাজশাহী নগরীর শপুরা এলাকায় পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি স্কুলের জায়গা দখল করে বোয়ালিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় গড়ে তোলার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছেের বাইরে নগরীর আরও বিভিন্ন স্থান সরকারি জায়গা, খাল, নদী দখল করে একের পর এক গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা।

এসব নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে। তবে বহাল তবিয়তে রয়েছে এসব অবৈধ স্থাপনাগুলো।

স/আর