থানা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগের নামে রাজশাহীসহ ১৯ জেলায় প্রতারণার জাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে একটি চক্র। আর সেই জালে এরই মধ্যে পা দিয়েছেন হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতি। ৫৮৪টি পদের বিপরীতে মোট চারটি পদে ১৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আর ওই বিজ্ঞাপন দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন রাজশাহীসহ দেশের ১৯টি জেলার হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতি। অনলাইনে আবেদন করতে বলা হলেও আবেদন করার পর পরই মোবাইলে কল করে প্রতারকরা নানা অজুহাত দিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের হিসাবে ৭৫০ টাকা করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। আর তাতেই সন্দেহ প্রবনতা বাড়ছে আবেদনকারীদের মাঝে।

এদিকে রাজশাহীর থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সূত্র মতে জানা গেছে, এই ধরনের নিয়োগের কথা তাদের জানা নাই। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের নিজ নিজ থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নিয়োগ পরীক্ষা হবে বলে উল্লেখ করা হলেও সেটিও জানে না কেউ।

প্রকাশিত ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আত্মসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের উন্নতম উন্নয়ন সংস্থা থানা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেদাল্যান্ডের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় মা ও শিশুস্বাস্থ্য প্রকল্পে রাজশাহী, জয়পুরহাট, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, রাজবাড়িসহ দেশের ১৯টি জেলার নাম উল্লেখ করে থানা সম্নয়কারী, ইউনিয়ন সুপারভাইজার, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর পদে মোট ৫৮৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এর বিপরীতে কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এদিকে আবেদন জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরীপ্রার্থীদের নিয়োগপত্রসহ প্রেশার মাপা মেশিন এবং আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র পাঠানোর নামে প্রত্যেক প্রার্থীকেক ০১৮১৭৫৭৪০৭৯ নম্বরের মোবাইল থেকে কল করে ৭৫০ টাকা করে দিতে বলা হয়। এই ফোন পাওয়ার পরে অনেকেই সেই টাকা ওই নম্বরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল এ্যাকাউন্টে দিতে বলা হয়। এরপর অনেকেই সেই টাকা চাকরী পাওয়ার আশায় দিয়ে দেন।

রাজশাহীর এ্যামিলি আক্তার নামের এক চাকরি প্রার্থী বলেন, তাঁকেও ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছিলো। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন-প্রতারক চক্র এভাবে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে। এরপর তিনি আর টাকা দেননি।

তবে টাকা প্রদানকারী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কুরিয়ারে নিয়োগপত্রসহ আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র পাঠানোর নামে ফোন করে ওই টাকা চাওয়া হয়। এরপর আমি টাকা দিয়েছি। সেই টাকা পাওয়ার পরে নাকি নিয়োগপত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাকরি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তারা বলেছে ট্রেনিংও দেওয়া হবে আমাদের। তবে মনে হচ্ছে প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়েছি।’

এদিকে ওই মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে হাসান আলী নামের এক ব্যক্তি নিজেকে অফিস প্রধান হিসেবে দাবি করে বলেন, ‘১৮ তারিখ দুপুরের মধ্যে যারা টাকা দিবে, তাদের নিয়োগপত্রসহ অন্যনান্য জিনিসপত্র আমাদের গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অনেকের ঠিকানাই সেগুলো পাঠানো হয়েছে। যারা টাকা দিবে না, তাদের নিয়োগপত্র পাঠানো হবে না।’ খরচের জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়েই কিভাবে নিয়োগপক্র দেওয়া হলো, কিভাবে বাছাই হলো, কতজন আবেদন করেছেন সেসব প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

অন্যদিকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, এই ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি আমরা জানি না। এই ধরনের কোনো কর্মসূচিও নাই। কাজেই এটি একটি প্রতারক চক্রের কাজ বলেই মনে হচ্ছে।’

স/আর