থমকে যাওয়া রাজশাহীর উন্নয়ন কাজে গতি ফিরছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী নগরীর পূর্ব বুধপাড়ার পাশে মোহনপুর এলাকায় প্রায় সাড়ে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজটি প্রায় শেয় পর্যায়ে। এরই মাঝে সারা দেশে হানা দেয় অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাস। এতে সারাদেশের ন্যায় থমকে যায় রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ।

 

শুধু এই ফ্লাইওভারই না, রাজশাহীতে চলমান হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে চলমান সকল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ থমকে গেছে। রাজশাহীতে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ এবং প্রশস্থ করণ, ফ্রাই ওভার, মার্কেট ও নতুন আবাসিক এলাকা নির্মাণ। রয়েছে হাইটেক পার্ক ও নভোথিয়েটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজও। তবে লকডাউন শিথিলে আবারো সেইসব উন্নয়ন কাজে গতি ফিরছে।

রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্লইওভারটির মূল অবকামোর কাজ শেষ পর্যায়ে। যানবাহন বা পায়ে হেটে ইট বিছানো রাস্তা ধরে ফ্লাইওভারটির একদিক দিয়ে উঠলে অপর প্রান্তের রাস্তা দিয়ে অনায়াসে নামা যাচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক মানুষ এই ফ্লইওভারের উপরে এসে ভিড় করে। এর উপরে দাড়িয়ে আশপাশের সবুজের ঘেরা মনোরম পরিবেশ সত্যিই উপভোগ করার মতো। যতোদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।

শালবাগান এলাকার আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড় থেকে এই ফ্লাই ওভারের ওপর দিয়ে নতুন ৮০ ফিটের বিশাল সড়কটি সোজা গিয়ে উঠেছে বিহাস আবাসিক এলাকার সামনের ফল গবেষণা কেন্দ্রের মোড়ে। দীর্ঘ এই সড়কটির কাজও থমকে আছে। সড়কের মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বড় কাজ বলতে এখন শুধু রাস্তার ওপর পিচ-পাথরের কাজটুকাই বাঁকি। তবে সড়কটি এরইমধ্যে স্থানীয়রা ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে।

নগরীর তালাইমারি থেকে আলুপট্টি স্বচ্ছ টাওয়ারের মোড় পর্যন্ত রাস্তার ডান পাশের অধিগ্রহণকৃত জমির ওপর স্থাপনা অপসারণের কাজটি থমকে আছে। একই ভাবে থমকে আছে নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি মোড় থেকে কাজলা মোড় পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ। এখানেও দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ১৭৩ কোটি টাকা ব্যায়ে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বাইসাইকেল লেনসহ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের প্রথম অংশের উদ্বোধন করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এই কাজটিও থমকে আছে। এই সড়কের ফুটপাত ঘেষে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজশাহীর প্রথম বাইসাইকেল লেন। থমকে আছে মনিচত্ত্বরে অবস্থিত সোনাদীঘি সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ।

এছাড়া সিটি ভবন সংলগ্ন বহুতল মার্কেট, কৃষ্ণচুড়া প্লাজা ও সিটি সেন্টারসহ বেশ কিছু মার্কেটের কাজও থমকে আছে। মালোপাড়ার মোড় থেকে দড়িখরবোনার মোড় পর্যন্ত সড়কটির কাজো বন্ধ। বন্ধ আছে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ওলিগোলির রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। নগরীর কামারুজ্জামান চত্ত্বর থেকে শুরু করে আমচত্ত্বর হয়ে নওগাঁ সড়ক প্রশস্থ করণের কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে। থেমে আছে চিড়িয়াখানা সংলগ্ন নভো থিয়েটার ও কোর্ট এলাকার পেছনে নদীতীরবর্তী আইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ।

এ ছাড়া আরও যেসব উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতিও থমকে আছে। সরকারি যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকিতে রাজশাহীর এই উন্নয়ন কাজগুলো চলছে তার মধ্য অন্যতম রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)।

আশার কথা তবে ৩১ মে থেকে লকডাউন শিথিল হওয়ায় উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু করে তা এগিয়ে নিতে ঠিকাদারদের অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট এই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারেরাও সেমোতাবেক কাজ শুরু করেদিয়েছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, রাজশাহীর সকল উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হলে এই শহরের চেহারা পুরো পাল্টে যাবে। রাসিকের অধিনে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। বলতে গেলে যা দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধই ছিলো। আরো অনেক কাজ আছে যা করোনা পরিস্থিতির কারণে শুরু করা যাচ্ছিলো না। গত তিন মাসে এসব কিছু প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া যেতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু প্রকল্প পিছিয়ে গেল। তবে লকডাউন শিথিল করায় আমরা ঠিকাদারদের জানিয়ে দিয়েছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে।

তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে ঠিকাদারেরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা তাদের কাজ তদারকি করছি। মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন স্যার নিয়মিত এসব কাজের খোঁকখবর রাখছেন। নিজেও স্পটগুলোতে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন বলেও জানান রাসিকের এই কর্মকর্তা।

স/অ