তিন বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি সাড়ে ১০ বছরে

কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে খুলনা-মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ। ৩ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে যাচ্ছে সাড়ে ১০ বছর। গতি না থাকাসহ নানা কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ১২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবারও চলছে মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া।

‘খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এ অবস্থা বিরাজ করছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণের দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

প্রতিবেদনে প্রকল্পটির অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধানত জমি অধিগ্রহণে অনেক সময় লাগাকে দায়ী করা হয়েছে। তাছাড়া কাজের মাঝামাঝি এসে পরামর্শক পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে সিইজি-নিপ্পন কই জেভি থেকে নতুন কসালট্যান্ট দায়িত্ব গ্রহণ, কিছু জটিল নন টেন্ডার আইটেম আসা (যেমন- অত্যাধিক লুজ সয়েল থাকায় ট্রিটমেন্ট, পাইল বারবার ফেল করায় ও বেস গ্রাউন্ডিং), আনাড়ি সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ এবং তিনজন প্রকল্প পরিচালক বদলিসহ নানা কারণে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে।

আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ  জানান, ইতোমধ্যেই প্রতিবেদনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং সমস্যা তুলে ধরে এগুলো সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তবে আইএমইডি থেকে ফলোআপ করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল ৮৭ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয় দফা আবারও ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমানে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে ১ হাজার ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণের ২ হাজার ৩৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ফলে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক হওয়া রেলসচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, শুরু থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তবে বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। ফলে অনেকটাই গতি এসেছিল। কিন্তু করোনার ধাক্কা লেগেছে। এ কারণে এখন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোম্পানি যেসব কাজ করছে সেগুলোর অগ্রগতি খারাপ না। কিন্তু সমস্যা হল ভারতীয় কোম্পানিকে নিয়ে। তাদের কাজের অগ্রগতি অনেক কম। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন বাস্তবায়নের আর বেশি জটিলতা হবে না।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পের রেল লাইন নির্মাণের কাজ বেশ পিছিয়ে আছে, যা শুধু ৫৪ শতাংশ মাত্র। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ জনবল নিয়োগ করে টার্গেট অনুযায়ী কাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে কাজের অগ্রগতি ও কাজের বরাদ্দ ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পে ব্যয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বক্ষণিক মনিটরিং রাখতে হবে। প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটির সব সভা সময়মতো আয়োজন করতে হবে।

প্রকল্পটির গ্রহণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব হবে। এছাড়া সার্ক মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট স্থাপনের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারিত হবে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর