৫ সিটি নির্বাচন : তিনটিতে শঙ্কা, দুটিতে নির্ভার আওয়ামী লীগ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভালোই চাপে আছে ক্ষামতাসীনরা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন এক রকম গলারকাঁটা। তার ওপর বিষফোঁড়ার মতো দেখা দিয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকার পরও যা জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ ভোগাচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

নির্বাচনী হাওয়ার মধ্যে এটা বেশ স্পষ্ট যে, পাঁচ সিটির মধ্যে খুলনা ও রাজশাহীতে বেশ ফুরফুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও দলের ঐক্য এবং বিরোধীদের দুর্বল অবস্থান— এই দুই সিটিতে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে দিয়েছে। যে কারণে এ দুই সিটি নিয়ে নির্ভার দলটি।

অপরদিকে গাজীপুর, সিলেট ও বরিশাল সিটিতে দলীয় কোন্দল সামনে আসছে। পাশাপাশি বিরোধী শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। যার কারণে বেশ চাপে আছে আওয়ামী লীগ।

এনিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের কাছে প্রশ্ন ছিল- জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে শক্ত প্রতিপক্ষের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দলও দেখা দিয়েছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ এ বৈতরণী কীভাবে পার করতে চায়? জয় নিশ্চিত করবে, নাকি ভোটের গ্রহণযোগ্যতা?

জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দুটোই নিশ্চিত করবো। কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছে বলে মনে করি না। আমাদের ভেতরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। মান-অভিমান যেটুকু আছে, খুবই সামান্য। এগুলো একটা সময়ে থাকবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে এবং জনমতের প্রতি সম্মান রেখে, তাদের মত যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে আসে, সে লক্ষ্যে কাজকর্ম চলছে সুন্দরভাবে। এনিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার আছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাবার্তা ও সংবাদ পরিবেশিত হয়, কারও কারও স্বার্থে বা গোষ্ঠীর স্বার্থে। এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাবো। সব জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা, বাধা-বিপত্তি ও অপরাজনীতি সতর্কভাবে পাহারা দিয়ে জনগণকে নিয়েই বৈতরণী পার হবো ইনশাআল্লাহ।’

তবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জয়-পরাজয় জনগণের হাতে। নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অবাধ হবে। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য সংহত করে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করবে। দলের পক্ষ থেকে সব বৈধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, উন্নয়ন মানবকল্যাণ, শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে জনগণ নৌকা মার্কায় পুনরায় ভোট দেবেন।’

সিলেটের চ্যালেঞ্জ আরিফুল

২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে মাঠে নেমে কাজও শুরু করেছে। একজন প্রবাসীকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে সিলেটের নেতাদের মধ্যে অভিমান বা ক্ষোভ আছে। যদিও সবাই এখন এক ব্যানারে নেমে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত সিলেট সিটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর খোঁজে মেলেনি। বিএনপি নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন করা, না করার ওপর নির্ভর করবে এখানকার জয়ের হিসাব-নিকাশ।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘ভোটের আগে তো একদম নিশ্চিত বলতে পারবো না। তবে আমাদের দলের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। আমাদের ধারণা, আমাদের প্রার্থী বের হয়ে আসবে (জয়ী হবে)।’

তবে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ভোটে আসবেন কি না, সেটা ২০ মে পরিষ্কার হবে। আরিফুল হক চৌধুরীর ভোট করা না করার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয়।

সিলেটের স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সব পক্ষ ভোটে নামছে। কিন্তু এখানে দলীয় ভোট কম। সাধারণ ভোট বেশি। মানুষ তো উন্নয়ন ও ব্যক্তি ইমেজ দেখে ভোট দেয়। আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে অনেক কাজ করেছেন। জনপ্রিয়তা তার বেশি। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তো মূলত ওসমানীনগরের লোক, প্রবাসী। তিনি তো সিলেট-২ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজও করেছেন। মনোনয়নে ইঙ্গিত পেয়ে তিনি শহরে ভোটার হিসেবে স্থানান্তরিত হয়েছেন। শহরের নেতারা তাকে মেনে নেওয়া কঠিন।

বরিশালে খোকন-রুপনের লড়াই, বাজিমাত ফয়জুলের!

১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট। এরই মধ্যে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত) নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু নিজেদের ভেতরের দূরত্ব বরিশালে বেশ শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। প্রার্থী নিজ ঘরেই বিরোধিতার আভাস দিয়েছেন। এমনকি নির্বাচন সমন্বয় কমিটিতেও সে আভাস পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সেখানে বিএনপির প্রয়াত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। একই সঙ্গে চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম সক্রিয় কাজ করছেন।

গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটের হারে চমক দেখানো এ দলটি নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছে। প্রথম হলো- বরিশালে চরমোনাই পিরের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মসনদ পাকা করতে তাদের সমর্থন ছিল চোখে পড়ার মতো। হেফাজত-জামায়াতসহ নানা দলের সঙ্গে বৈরিতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের কদর অনেক। এসব কারণে অনেকে আশঙ্কা করছেন, খোকন-রুপনের লড়াইয়ে ফয়জুল বাজিমাত করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

গাজীপুরে গলারকাঁটা জাহাঙ্গীর

২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট। বিদায়ী মেয়াদে আলোচিত এই সিটি, ভোটেও বেশ সরব। আলোচিত মেয়র জাহাঙ্গীর হাইকোর্ট পর্যন্ত ঘুরে এবার বল দিয়েছেন জনতার কোর্টে। মায়ের আঁচল ধরে তিনি থাকছেন মাঠে সক্রিয়। এ নিয়েই মোটামুটি গরম গাজীপুর। সম্ভাবনা ও শঙ্কার মধ্যেই কাজ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তবে মাঠ নৌকার জন্য মৃসণ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তুলনামূলক সুবিধাজনক খুলনা-রাজশাহী

১২ জুন খুলনা ও ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ভোট। খুলনায় মাঠের পরিবেশ ভালো। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার খালেকের ব্যক্তি জনপ্রিয়তা ও দলের ঐক্যে সেখানে বেশ ফুরফুরে দলটি। একইভাবে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। দলগতভাবে তারা ঐক্যবদ্ধ। পাশাপাশি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনও গত মেয়াদে নিজ কাজের ছাপ রেখেছেন।

জনগণের মতামত যাই হোক বা জয়-পরাজয় যেদিকেই যাক, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলের অগ্নিপরীক্ষা এই ভোট।