তবে কি টিকাও ওমিক্রনকে দমাতে পারবে না?

খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন-এর প্রতিরোধকারী টিকা দ্রুত মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন ভ্যাকসিন নির্মাতারা। নতুন স্ট্রেইনটি বি.১.১.৫২৯ নামে পরিচিত। এর মধ্যে পূর্বের সম্পর্কযুক্ত  কিছু মিউটেশন আছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এটি পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

ভয়ের কারণ হলো- অনেকেই এটাকে ‘ভ্যাকসিন প্রতিরোধী’ বা এই নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন খুব বেশি কার্যকর নয় বলে মনে করছেন। তবে আশার কথা হলো, ফাইজার-বায়োএনটেক বলছে, তাদের বিশেষজ্ঞরা ‘অনুমোদনসাপেক্ষে ১০০ দিনের মধ্যে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি টেইলর-মেড ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হবে’।

এদিকে মডার্না বলেছে, তারা ২০২১ সালের প্রথম দিক থেকে ‘উদ্বেগজনক নতুন ভেরিয়েন্ট চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি’ নিয়ে রেখেছে। নোভাভ্যাক্সের মত, তারা এর মধ্যেই বি.১.১.৫২৯ নামে পরিচিত জেনেটিক সিকোয়েন্সের ওপর ভিত্তি করে একটি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি শুরু করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি পরীক্ষা ও উৎপাদন শুরু হবে।

গতকাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বি.১.১.৫২৯ কে ‘উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট’ মনোনীত করেছে। সেই সঙ্গে এই ভেরিয়েন্টটির দাপ্তরিক নাম দেওয়া ওমিক্রন, যা গ্রিক বর্ণমালার পঞ্চদশ অক্ষর।

স্ট্রেইনটি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ অস্থায়ীভাবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করছে।

যদিও এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত কোনো সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়নি, তবে বেলজিয়ামে এমন একটি ঘটনা হয়েছে। সংক্রমিত ওই ব্যক্তি টিকাবিহীন বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন বলে জানা যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ মহামারি বিশেষজ্ঞদের একজন সেলিম আবদুল করিম স্কাই নিউজকে বলেন, এটি যুক্তরাজ্যে হবে বলে তিনি মনে করেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ সতর্ক করে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর ‘এর ভিন্ন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে’। উচ্চহারে টিকা নেওয়ার কারণে যুক্তরাজ্য একটি ‘শক্তিশালী অবস্থানে’ আছে। তিনি আরো বলেন, ওমিক্রনের উপস্থিতি মানে একটি বুস্টার ডোজ পাওয়া এখন আরো গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং এবং তারপর বতসোয়ানা থেকে একটি কভিড ভেরিয়েন্ট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটে নমুনাগুলো আপলোড করার পরে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা ২৩ নভেম্বর প্রথম নতুন স্ট্রেইন সম্পর্কে সচেতন হন। এ পর্যন্ত মোট ৫৯টি নমুনা আপলোড করা হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য পাঁচটি দেশ নামিবিয়া, লেসোথো, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি এবং জিম্বাবুয়ে থেকে যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট রবিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই দেশগুলোকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রবিবার থেকে এসব গন্তব্য থেকে ফিরে আসা ব্রিটিশ নাগরিকদের ১০ দিনের জন্য সরকার অনুমোদিত হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

স্বাস্থমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, সরকার এখনও এই শরৎ এবং শীতকালে কভিড-১৯ পরিচালনার জন্য ‘প্ল্যান এ’ অনুসরণ করছে। তবে এ-ও বলা হয়- ‘যদি আমাদের আরো প্রয়োজন হয়, আমরা করব’।

যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রফেসর ক্রিস হুইটি বলেন, প্রয়োজন হলে জনসাধারণ নতুন বিধি-নিষেধ মানবে কি-না সেটা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ