তদন্তে অনাস্থা ছাত্রলীগ নেত্রীর : বহিষ্কারাদেশ অগঠনতান্ত্রিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান ইশাকে হেনস্থার অভিযোগে হলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক খালেদা হোসেন মুনকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুন। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বহিষ্কারাদেশকে অগঠনতান্ত্রিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন মুন।

এর আগে ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশাকে বিশ্ববিদ্যালয়, হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারা করা হয়েছিল। পরে ছাত্র বিক্ষোভ থামলে পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগ, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়। উল্টা সুফিয়া কামাল হলের তদন্ত কমিটি নিপীড়নের শিকার কয়েক ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। ইশাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। পাশাপাশি ছাত্রলীগও এ ঘটনায় ২৪ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। শুরু থেকেই এ বহিষ্কারাদেশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির দুর্বলতা তুলে ধরে ছাত্রলীগ নেত্রী মুন বলেন, তথাকথিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ এই তদন্ত কমিটি আমার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগই করেনি। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে- তাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়। কারণ বহিষ্কৃতদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে পুরো নাম উল্লেখ করা হয়নি। অনেকের বিভাগ ভুল রয়েছে। তাহলে তারা কি তদন্ত করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে? তদন্তের বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে এদের একজন ঘটনার দু’দিন আগে দেশ ত্যাগ করেন, একজনের ঘটনার ১০ দিন আগে হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ২ সপ্তাহ ডাক্তার রেস্টের পরামর্শ দেন। তাহলে তারা কিভাবে ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে? তিনি প্রশ্ন রাখেন, কমিটি ঠিকভাবে তদন্ত করলে বহিষ্কৃতদের পূর্ণ নাম না লেখা এবং কয়েকজনের বিভাগ ভুল লেখার কারণ কি?

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এই ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, আমি গত এক বছর ধরে হলে থাকি না। ঘটনার রাতেও আমি হলে ছিলাম না। ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাহলে আমি কীভাবে দোষী হই। কোন অপরাধের ভিত্তিতে আমাকে বহিষ্কার করা হলো? তিনি এ বহিষ্কারের ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে বলেন, অগঠনতান্ত্রিক এ ঘটনায় দু’টি পক্ষই সমানভাবে দায়ী। তাই এ ঘটনায় আমি পুনরায় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার দাবি করছি।

এদিকে ইশার সঙ্গে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই উল্লেখ করে মুন বলেন, ‘ইশা আমারই ছোট বোনের মতো ছিল। আমার সহযোগিতায় সে হলে উঠেছে। পরে তার মাধ্যমে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় আমি মেয়েদের হলে উঠাতাম।’ দ্বন্দ্ব না থাকলে ইশাকে কেন তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে এটাই আমার প্রশ্ন। কেন আমাকে বিনা অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে?

উল্লেখ্য, যে কমিটি ছাত্রলীগ নেত্রী খালেদা হোসেন মুনকে অভিযুক্ত করে বহিষ্কারের সুপারিশ করে, ওই তদন্ত কমিটিই ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত ইফফাত জাহান ইশাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে প্রতিবেদন দেয়। এত বড় একটি ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির দেয়া প্রতিবেদন শুরু থেকেই বিতর্কের মুখে পড়ে। এছাড়াও শুরু থেকেই এ তদন্ত কমিটি নিয়ে অনাস্থা ছিল। কমিটির প্রধান নিজেই বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।