এলাকাবাসী জানতেন, ফরিদা বেগম রোজী (৪৫) নামের এক গৃহবধূ মারা গিয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। ওই নারীর যে শ্বাসকষ্টের মত করোনা উপসর্গ ছিল— পরিবারের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়নি কাউকেই। চেপে যাওয়া হয়েছে পুরোপুরি। ফলে স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া রোগীর মতোই তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি এলাকার লোকজনও ঘরে দেখতে আসে মৃত ওই গৃহবধূকে। রবিবার (২৪ মে) চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজারে ঘটেছে এমন ঘটনা। এর মাত্র দুদিন পর মঙ্গলবার (২৬ মে) ওই নারী থেকে নেওয়া নমুনায় মিলেছে করোনাভাইরাস।
ঈদের আগের রাতে মারা যাওয়া ওই নারীর জানাজা পড়ানো হয় পরদিন সোমবার ঈদের জামাতের পরপরই। পরিবারের পক্ষ থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করায় ঈদ জামাতে অংশ নেওয়া শত শত মানুষও এ জানাজায় অংশ নেয়। শেষমেশ মঙ্গলবার রাতে (২৬ মে) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের নথিতে দেখা গেল ওই নারীর করোনা পজিটিভ! শুধুমাত্র তথ্য গোপন করার কারেণে ঝুঁকিতে পড়লো হাটহাজারীর আমান বাজার এলাকার শত শত পরিবার।
জানা যায়, হাটহাজারীর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের খোরশেদ আলমের স্ত্রী ফরিদা বেগম রোজী বেশ কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শুরুতে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। এরপরও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ৩ দিন আগে তাকে নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকার সেবা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার (২৪ মে) রাত ১২টায় সেখানে মারা যান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার ঈদের নামাজের পর সকালে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কয়েকশত মানুষ এ জানাজায় অংশ নেয়। তার আগে স্বাভাবিক কারণে মৃত ব্যক্তির মতই তাকে কাফনের কাপড় পরানোসহ ধর্মীয় রীতি পালন করতে অংশ নেয় স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজন। স্থানীয়রা আরও জানান, মারা যাওয়া নারীর পরিবারের সদস্যরা করোনা উপসর্গের বিষয়টি গোপন করার ফলে গোটা এলাকা ঝুঁকিতে পড়ে গেল। মরদেহ দেখতে ওই বাসায় যাওয়া লোকজন দুই দিন ধরে এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছেন। এতে তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনও রয়েছেন এখন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে। প্রশাসনের উচিত এলাকাটি লকডাউন করার পাশাপাশি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করা।
তারা জানান, হাটহাজারীর আমান বাজার মসজিদের পাশে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন ওই নারী। তবে তার শ্বশুরবাড়ির ৩০ গজের মধ্যে থাকা নুর নাহার ভবনটির মালিকও তারা। এ ভবনের ৪০টি ফ্ল্যাটে প্রায় ৫০০ জন মানুষ থাকে। ওই ভবনেও রোজীর পরিবারের সদস্যদের যাতায়াত থাকায় ভবনটির বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছে। এদিকে হাটহাজারী থানার অন্তর্ভুক্ত এলাকা হলেও করোনা আক্রান্ত মৃত নারীর ঘরে যাওয়া আমান বাজার এলাকার লোকজনের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে রাজি নয় হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এই এলাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত।
এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমতিয়াজ হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকা আমার আওতাধীন নয়। এটি সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকা।’ এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার রাত ১১টায় জানতে পেরেছি, ওই গৃহবধূর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল করোনা পজিটিভ। আমরা তার স্বজনদের লকডাউনের কথা জানিয়েছি। বুধবার সকালে এলাকাটি লকডাউন করা হবে। স্বজনদের নমুনা পরীক্ষার কথাও বলা হয়েছে।’