দেশে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণের দিন গতকাল রবিবার প্রায় দেড় মাস পর খুলে দেওয়া হয়েছে কিছু মার্কেট ও দোকানপাট। তবে সুরক্ষাব্যবস্থা ছিল নিতান্ত ঢিলেঢালা। বড় বড় শোরুম ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি কোথাও। যেসব মার্কেট খুলেছে সেখানে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মানুষের। বিশেষ করে পাইকারি দোকান, মোবাইলসহ নানা ধরনের দোকানে মানুষের বেশি ভিড় দেখা গেছে। কেনাকাটা করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে ক্রেতাসাধারণকে সতর্ক থাকতে দেখা যায়নি। দোকানিদের পক্ষ থেকেও সামাজিক দূরত্ব মানায় তৎপরতা ছিল না।
তবে পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরের বড় বড় বিপণিবিতানগুলো গতকাল ছিল বন্ধ। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা নিউ মার্কেট, মৌচাক, আনারকলি মার্কেট, মোতালিব প্লাজাসহ বড় মার্কেট খোলা হয়নি। তবে গতকাল মার্কেট খোলার প্রথম দিন ইস্টার্ন প্লাজা, গাজী শপিং কমপ্লেক্স এবং এলিফ্যান্ট রোডের দোকানপাট, আড়ং, বাটা, এপেক্সসহ প্রায় সব ফ্যাশন হাউস খোলা ছিল।
অবশ্য ক্রেতাদের অনেকে জানিয়েছে, ঈদের বাজার নয়, গত প্রায় দেড় মাস মার্কেট বন্ধ থাকায় বাসায় পরার জামাকাপড়, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী কিনতে তারা মার্কেটে এসেছে।
মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী প্লাজা এবং মিরপুর ২ নম্বরের মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স বন্ধ ছিল। তবে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত দেশের নামি প্রায় সব ফ্যাশন হাউসের শোরুম ছিল খোলা। গতকাল দুপুরে চন্দ্রবিন্দু, রেক্স, ইজি, জেন্টেল পার্ক, নাগরদোলা, গ্রামীণ ফ্যাশন, বেবি শপসহ একাধিক ফ্যাশন হাউস খোলা দেখতে পাওয়া গেছে। এসব দোকানে কিছু ক্রেতাও দেখা গেছে।
মিরপুর ১০ নম্বর শাহ আলী প্লাজার বিপরীতে ফাহাদ কমপ্লেক্সে রয়েছে মোবাইল মার্কেট। সেখানে অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আলাউদ্দিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘এক মাস আগে মোবাইলের স্ক্রিন ভেঙে গেছে। কোনো রকমে কাজ চালিয়েছি। দোকান খোলার প্রথম দিন তাই মেরামত করতে এসেছি।’ তবে এসব দোকানের সামনে ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে’ সংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই সারা হচ্ছে দায়। কাউকে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
গতকাল রাজধানীতে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে। দুপুরে নিউ মার্কেট ওভারব্রিজসংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটের নিচতলায় দেখা যায়, ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে মার্কেটে প্রবেশ করছে। লাইনে দাঁড়ানোর পরই তাদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এরপর তাদের বিশেষভাবে তৈরি জীবাণুনাশক ঘরে প্রবেশ করিয়ে স্প্রে করে তবেই মার্কেটে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। মার্কেটের বাইরে হ্যান্ডমাইক হাতে নিরাপত্তা প্রহরীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মার্কেটে প্রবেশের আহ্বান জানাচ্ছেন।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত সব দোকান খোলা না থাকলেও পাঞ্জাবি ও কিছু কিছু ব্র্যান্ড আইটেমের দোকান এবং প্রায় সব জুতার দোকান খোলা দেখা গেছে।
গতকাল টিকাটুলীর রাজধানী মার্কেট, ঢাকার গুলিস্তানের ট্রেড সেন্টার, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট বন্ধ দেখা গেছে। তবে গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশে হকাররা পণ্য নিয়ে বসেছেন। ক্রেতাও ছিল। ফুটপাতের পোশাকের দোকানগুলোয় দেখা গেছে যথেষ্ট ভিড়।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার শ্যামবাজার, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর, পোস্তগোলা এলাকার গলিপথে দেখা গেছে মুদি দোকান, মিষ্টির দোকান, লন্ড্রি, পান দোকান, ওষুধের দোকান, ফার্নিচার, মোটরসাইকেলের গ্যারেজ, হার্ডওয়্যারের দোকানসহ প্রায় সব ধরনের দোকান খোলা দেখা গেছে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের শ্যামপুর বাজারে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় দেখা গেছে।
ওয়াইজঘাটে রয়েছে মুন কমপ্লেক্স ও হাফেজ শরীফ মার্কেট। ওখানকার বেশির ভাগ দোকান খুলেছে। কিন্তু ক্রেতার সমাগম কম। পাইকারি ক্রেতারা পণ্য কিনছেন। বড় মার্কেট হলেও প্রবেশপথে দেখা যায়নি করোনা থেকে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা। ইসলামপুরের লায়ন টাওয়ার ও চায়না মার্কেটে দেখা গেছে ব্যাপক ভিড়।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ