ঢাকা-দিল্লি সরাসরি ফ্লাইট: এয়ার ইন্ডিয়ার পর এবার বিমান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লি থেকে ঢাকা রুটে ডাইরেক্ট ফ্লাইটে মনোপলি ছিল ভারতের জেট এয়ারওয়েজের। যেহেতু রুটটি তাদের একচেটিয়া, অফ সিজনেও জেট রিটার্ন ফ্লাইটে ভাড়া নিত অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রুপি (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ হাজার!)। অথচ প্রায় সমান টাকা বা আরেকটু বেশি খরচ করলেই দিল্লি থেকে ঘুরে আসা যায় লন্ডনেও!

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে জেটের সেই একচেটিয়া কারবারের অবসান হলো এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের দিল্লি-ঢাকা ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে। আপাতত সপ্তাহে চারদিন দিল্লি থেকে ঢাকা যাবে এই সার্ভিস, আবার ঢাকা থেকে দিল্লিও ফিরবে সপ্তাহে চারদিন। ধীরে ধীরে এই পরিষেবার ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হবে বলেও এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে জানানো হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে দিল্লি-ঢাকা রুটে রিটার্ন ফ্লাইটের ভাড়াও অনেক কম। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, একটু আগেভাগে টিকিট কিনলে বারো-তেরো হাজার রুপিতেও এই ফ্লাইটে দিল্লি থেকে ঢাকা ঘুরে আসা সম্ভব।

ভারত-বাংলাদেশের দুই রাজধানীর মধ্যে যাদের নিয়মিত যাতায়াত আছে, তাদের আরও একটা সুখবর দিয়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও এদিন জানিয়েছেন, চলতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুম থেকে ঢাকা-দিল্লি রুটে বাংলাদেশ বিমানও সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে।

রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিল্লিতে ডাইরেক্ট ফ্লাইট চালু করার জন্য বিমানের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ভারতের সিভিল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্টকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, চলতি বছরের সামার শিডিউলেই (গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি) বিমান দিল্লি সার্ভিসকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।’

ফলে এই রুটে যদি জেট এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও  বিমান বাংলাদেশ-এর মতো তিনটি এয়ারলাইন্স ডাইরেক্ট সার্ভিস চালু করে, তাহলে  প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক নিয়মেই যাত্রীভাড়া অনেক কমতে বাধ্য!

আসলে ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্ক যখন ঐতিহাসিকভাবেই ‘সেরা সুসময়ে’র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে – তখন দুই দেশের দুই জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন (‘ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার’) বিমান বাংলাদেশ ও এয়ার ইন্ডিয়া কারও দুই রাজধানীর মধ্যে সরাসরি কোনও ফ্লাইট  পরিষেবা নেই, এই তথ্যটা বেশ অবাক করার মতোই।

অথচ এক সময় এই দুই সংস্থাই ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সরাসরি বিমান চালাত, যদিও বেশ কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

গত তিন-চার বছর ধরেই এই পরিস্থিতির পুরো ফায়দা লুটে আসছে ভারতের বেসরকারি জেট এয়ারওয়েজ। দিল্লি থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য যাদের সময়ের তাড়া থাকত, কিংবা যারা অসুস্থ রোগীকে দেখানোর জন্য ভারতের রাজধানীতে আসতেন, তাদের কাছে ডাইরেক্ট সার্ভিস বলতে একমাত্র অপশন ছিল জেট এয়ারওয়েজ।

ফলে জেট অনেকগুণ বেশি ভাড়া হাঁকা সত্ত্বেও এতদিন তারা মাথাপিছু প্রায় চল্লিশ হাজার রুপি খরচ করে, সেই বিমানেই চাপতে বাধ্য হতেন। অথবা কম খরচে যেতে চাইলে তাদের যেতে হতো কলকাতা ঘুরে। ফলে বিশেষ করে অসুস্থ রোগী বা সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীদের দিল্লি থেকে ঢাকা যেতে হলে জেট ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।

কিন্তু যাত্রীদের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিমান বা এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ঢাকা-দিল্লি ডাইরেক্ট সার্ভিস বন্ধ করেছিল কেন?

দিল্লির রাজীব গান্ধী ভবনে (সিভিল এভিয়েশন বিভাগের সদর দফতর) কান পাতলে এ প্রশ্নের যে জবাব পাওয়া যায়, সেটাও খুব কৌতূহলোদ্দীপক। জেট যখন দিল্লি-ঢাকা সার্ভিস চালু করে, তখন নাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের হঠাতে তারা টাকা খরচ করেছিল জলের মতো। তার কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় বিমানের ঢাকা-দিল্লি পরিষেবা।

এয়ার ইন্ডিয়ার সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পেছনেও অনেকটা একই রকম কারণের কথা শোনা যায়। সরকারিভাবে এয়ার ইন্ডিয়া অবশ্য শিডিউলের সমস্যা, এয়ারক্র্যাফটের অভাব ইত্যাদি নানা যুক্তি দিয়ে থাকে।

কিন্তু ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেই ছবিটা পাল্টাতে যাচ্ছে পাকাপাকিভাবে।

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর নাইন জিরো ওয়ান টু যখন ঢাকার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামল, তখন থেকেই আসলে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে দূরত্বটা আবার এক লাফে কমে গেল অনেকটা! সামনে গরমের মাসগুলোতে একই রুটে বিমানের পরিষেবা চালু হলে দুই রাজধানী চলে আসবে আরও কাছাকাছি, পকেটের আরও নাগালে!

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন