ঢাকা থেকে আড়াইশ’ কিলোমিটার হেঁটে বাগাতিপাড়ায় এসেই কোয়ারেন্টিনে !

বাগাতিপাড়া  প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শংকায় চারিদিকে চলছে লকডাউন। সড়কে চলছেনা যাত্রিবাহি যানবাহন। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত অনেকেই কর্মস্থল থেকে নিজ এলাকায় ফিরতে পারছেন না। সুযোগ নিয়ে অনেকেই পণ্যবাহি যানে অথবা সড়কে চলাচলকারী যানবহনে করে ফিরছেন। বাড়ি ফিরলেও বাধ্যতামুলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে তাদের।

তবে নাটোরের বাগাতিপাড়ার যুবক বেনজামিন (২৫) কোন গাড়িতে নয় নাড়ির টানে ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে বাড়িতে ফিরেছেন। প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরলেও তাকে থাকতে হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। তিনি উপজেলার বিহারকোল এলাকার বাসিন্দা পৌর কাউন্সিলর আয়েজ উদ্দিনের ছেলে।

জানা গেছে, বেনজামিন ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত ছিলেন। চাকরীর টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে সময়মত বাড়ি ফিরতে পারেননি। যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনি পুলিশের তল্লাশীও ছিল পথে পথে। তাই গত ১৪ এপ্রিল পায়ে হেঁটেই তিনি রওনা হন বাগাতিপাড়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পথ একটানা পায়ে হেঁটে ৩৬ ঘন্টায় গত শুক্রবার ভোর রাতে নিজ গ্রামে এসে পৌঁছান তিনি। পথে শুধু নৌকায় চেপে যমুনা নদী পার হতে হয়েছে। বেনজামিনের বাড়ি আসার এ খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করার প্রস্তুতি নেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী জনপ্রতিনিধি বাবা আয়েজ উদ্দিনের সেবা করার উদ্দেশ্য ছিল বেনজামিনের। কিন্তু পরিবারের লোকদের চাপে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়। রোববার বিকেলে বেনজামিনকে রাখা হয় বাগাতিপাড়া পাইলট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিন এখানে আরো একজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এইখানে মোট ৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

বেনজামিনের পরিবার জানায়, সে গত ১৪ এপ্রিল ভোরে সাভার আশুলিয়া থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩৬ ঘন্টায় সে বাড়ি এসে পৌছায়। পরে করোনা প্রতিরোধ কমিটির (সিপিসি) সহযোগিতায় গত শনিবার বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এ থাকে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সারা দেশে লকডাউন ঘোষনার পর থেকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বাগাতিপাড়ায় আসতে শুরু করে। ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো হয়। এসব ফেরত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা হয়। উপজেলায় ইতিমধ্যে ৭টি প্রাতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বশেষ বেনজামিনসহ ২৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, নিজেরা সচেতন হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রয়োজন হতোনা। উপজেলায় এপর্যন্ত ২৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ থেকে ৩ জন ব্যতিত প্রায় সকলকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোয়ারেন্টিনে থাকা কয়েকজনের পরিবারকেও দিতে হচ্ছে খাদ্য সহায়তা বলে জানান তিনি।

স/অ