ড্রাগন চাষে লাভবান রাজশাহীর বাশার

জেসমিন আরা ফেরদৌস:

ফলটির উৎপত্তিস্থল সেন্ট্রাল আমারিকাতে হলেও বাংলাদেশে এখন এর চাষাবাদ বেড়ে গেছে বহুলাংশেই। পাঠক কথা বলছিলাম, ক্যাকটাস জাতীয় ফল ‘ড্রাগনের’। বিদেশী ফল হিসেবে পরিচিত হলেও অল্প সময়েই সুপরিচিত হয়ে উঠেছে দেশবাসীর কাছে। আর এ ফল চাষ করেই সফলতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন দেশের বিভিন্ন ড্রাগন চাষী। তেমনই একজন হলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এম.কে বাশার। ড্রাগন চাষ করে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।

রাজশাহী শহর থেকে ১৯ কি.মি. দূরে অবস্থিত গোদাগাড়ী উপজেলার উদপুর গ্রামে ৪৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন তার বাগান ‘গ্রীন ওয়ার্ল্ড’। নামের সাথেই মিল রেখেই ‘গ্রীন ওয়ার্ল্ড’ কে সবুজে সবুজে সাজিয়ে তুলেছেন তিনি। ড্রাগনের পাশাপাশি কফি,ক্যাপসিকাম,খেজুর,এ্যাভোকাডো,কাঁঠাল, সিডলেস লেবু,চায়না থ্রি কমলা,ব্যানানা ম্যাঙ্গো ইত্যাদি চাষ করে থাকেন তিনি। তবে এসব ফল বা সব্জির মধ্যে ড্রাগন চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক বলে জানান বাশার।

ড্রাগন চাষের ইতিকথা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাশার বলেন, ‘ ২০১৯ সালে ৬ বিঘা জমিতে বিঘা প্রতি ১ হাজার চারা রোপণের মাধ্যমে আমি ড্রাগন চাষ শুরু করি৷ সে সময় সবকিছু মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছিলো তিন লাখ। এরপর ১১ মাস পর আমি প্রথম ফল পাই৷’

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর বিঘা প্রতি জমিতে ড্রাগন চাষ করতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বাৎসরিক আয় বিঘাপ্রতি হয় প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা। এছাড়াও আমার এখানে দৈনিক ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। যারা এক সময় বেকার জীবন যাপন করতো আমার এই বাগানের মাধ্যমে আমি তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি৷’

বর্তমানে ড্রাগন চাষী হলেও বাশার ছিলেন একজন চাকুরীজীবী৷ ফিশারীতে চাকুরী করতেন তিনি। কিন্তু মৎস্যচাষ বাদ দিয়ে ড্রাগন চাষের দিকে কেন ঝুঁকলেন তিনি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলন, ‘আমাদের যেসব প্রধান অর্থকরী ফসল রয়েছে অর্থাৎ গম,ধান ইত্যাদি চাষ করে বেঁচে থাকায় দায়। বিঘা প্রতি ধান লাগাতে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা কিন্তু ফসল বেচে পাওয়া যায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ড্রাগনে ৮০ হাজার টাকা খরচ হলেও বছর শেষে সেখান থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা। আর এসব লাভের কথা চিন্তা করেই আমি ড্রাগন চাষে জোর দিয়েছি।

প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে বাশার বলেন,’ ড্রাগন ফল সারাবছরই চাষ করা যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে ড্রাগন চাষ করা উত্তম। কারণ বর্ষায় গাছ নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারণত বছরের মে- নভেম্বর মাস পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। ফুল থেকে ফল হতে ৫৫-৬০ দিন সময় লাগে।’ এছাড়াও ড্রাগন গাছের ডাল কেটে চারা তৈরি করা হয়। আর সে চারাও বেশ দরে বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি।

ড্রাগন গাছের পরির্যার বিষয়ে তিনি সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ড্রাগন গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি অল্প পরিমাণে টিএসপি,জিপসাম,দস্তা,পটাশ ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একটি গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্তও বাঁচে বলে জানান তিনি।

প্যাকেজিং সম্পর্কে তিনি জানান, ফল পাকার পর প্লাস্টিকের ক্যারেটে চারিদিক কাগজে মুড়িয়ে ড্রাগন বাজারজাত করা হয়। আর এসব ফল ক্যারেটে প্রায় ৩-৪দিন ভালো থাকে। এছাড়াও ফ্রিজে রেখে বহুদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে জানান তিনি। শুধু মাত্র রাজশাহীতে নয় রাজশাহীর বাইরে ঢাকা,চট্টগ্রাম ও সিলেটেও বেশ কদর রয়েছে বাশারের ড্রাগনের। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয় তার বাগানের ড্রাগনের।

দেশের প্রান্তিক চাষীদের উদ্দেশ্যে বাশার বলেন, যদি তারা ১০ কাঠা বা ১ বিঘা জমিতেও ড্রাগন চাষ করেন তাহলে তারা খুব সহজেই তাদের সংসার চালাতে পারবেন। তাদের আর অভাবে অনটনে ভুগতে হবেনা।

স/জে