ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ‘ভর্তি নীতিমালা’ আত্মঘাতি : আইডিইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো রকমের বয়সের সীমাবদ্ধতা না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন বাস্তবায়নে এই নীতিমালা মেধাহীন শিখন হবে বলে আশঙ্কা করছেন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, রাজশাহী।

মন্ত্রনালয়ের এমন হঠকারি সিদ্ধান্তে অসন্তোষে ভুগছে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট এবং সার্টিফিকেটের গুরুত্ব কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য আত্মঘাতি এই নতুন ভর্তি নীতিমালা-২০২০ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। পাশাপাশি বিগত ২০১৯ সালের ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের এই বৃহৎ সংগঠনটি।

গত ৪ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধীতা করে আইডিইবি। আইডিইবি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী শাখার সভাপতি প্রকৌশলী মো. আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ০৯ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ বৃহস্পতিবার ভার্চ্যূয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সদস্যগণ বিষয়টিতে গভীর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভারসাম্য বজায় রেখে হয়ে থাকে। এখানে নীতিমালাটি জনগুরুত্ব এবং মেধা ও কাজের মানের দিক বিবেচনা করা হয়নি। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে কাজের মান থাকবে না। এছাড়াও মেধাহীন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে অন্যান্য মানবিক কাজে এসব বেকারের অংশগ্রহণ ব্যাহত হবে। শিক্ষা ও কাজের খাপখাওয়ানো কঠিন হবে। ফলে ভবিষ্যতে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে এবং শিথিলতা বিরাজ করবে। অর্থাৎ কাজের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণ শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমনটি নয়। পুরো দেশের উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এই সেক্টরটি অনেকটা মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। যার বিরুপ প্রভাব পড়বে সুদুরপ্রসারি।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির নীতিমালায় বয়স অবারিত করা এবং গত বছরের ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ এর পরিবর্তে হ্রাস করে ২.৫০ করা হয়েছে। এমন আত্মঘাতি ও হটকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়ার প্রেক্ষিতে দেশের কারিগরি শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়াবে। দেশের শিক্ষাবিদ ও সরকার কর্তৃক কোনো স্টাডি ছাড়াই ঘোষিত হটকারী নীতিমালা বাতিল করার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২০২০ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ছাত্র ভর্তি করার জন্য আইডিইবি’র রাজশাহীর নির্বাহী কমিটির সভা থেকে আহ্বান জানানো হয়।

আইডিইবি, রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ হোসেন শাহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরিচালনায় এই ভার্চ্যূয়াল সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোঃ কবির হোসেন এবং জেলা কমিটির সহসভাপতি, সহসাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক সহ অন্যান্য সম্পাদক, নির্বাহী সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ভর্তি নীতিমালায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ ও গনিতে জিপি ৩.০ এবং ২০১৭-২০১৮-২০১৯ (৩ বছরের) এর শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ ছিল। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তিতে বয়সের বাঁধা তুলে দিলে সরকারি পলিটেকনিক এর শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত হবে ও বয়সের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।

অন্যদিক ২০১৯ সালে সরকারি পলিটেকনিকে ৪৯ হাজার আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার আবেদন হয়েছিল, তাহলে কি কারণে ৩.৫০ এর পরিবর্তে এ বছর ২.৫০ এ নামানো হলো- তা কারো বোধগম্য নয় এবং তা কারিগরি শিক্ষার মান নিম্নমুখী করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে আইডিইবি।

আইডিইবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে কোভিড-১৯ এর মহাসঙ্কট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন একটি অগ্রহণযোগ্য, আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরটিকে অশান্ত করে তুলেছেন যা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত।

তিনি বলেন, শনিবার সকাল ১১টায় আইডিইবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল সভা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৯ এর বিধিমালা তথা জিপিএ ৩.৫০ ও গণিতে জিপি ৩.০ এবং ২০১৮-২০১৯-২০২০ (৩ বছরের) এর শিক্ষার্থীদের ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। আশা করছি বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সাথে আইডিইবি, রাজশাহী একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

স/অ