ডা. ফেরদৌসকে কোয়ারেন্টিনে রাখার বিরুদ্ধে নোটিশ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মতো মৃত্যুপুরী থেকে বাংলাদেশে ফেরা ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে কেন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।

শুক্রবার (১২ জুন) ই-মেইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সালের পক্ষে এ নোটিশ পাঠান ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা।

ডা. ফেরদৌস খন্দকার গত রোববার (৭ জুন) বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে তাকে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

নোটিশে জানানো হয়, ‘গত রোববার ডা. ফেরদৌস দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে। তবে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। কারণ ডা. ফেরদৌস খন্দকার করোনা শনাক্তের আ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল।’

নোটিশে বলা হয়, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনা শনাক্তের আ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয় এবং এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল, তাই ডা. ফেরদৌস খন্দকার একজন করেনাযোদ্ধা।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার কারণ দর্শিয়ে আগামী দুইদিনের মধ্যে আমাদের জানাবেন যে, কোন আইনের বলে এবং কিসের ভিত্তিতে একজন করোনাজয়ী যোদ্ধাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, যেখানে ওই একই সময়ে বিদেশ থেকে আসা অন্যান্য যাত্রীদের এবং পরবর্তীতে চীন থেকে আসা ডাক্তারদের দেশের অভ্যন্তরীণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। আগামী দুইদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা কোনো জবাব না পেলে মক্কেলের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব’।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে তৎপর স্বাস্থ্য অধিদফতর

করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণার পর এ রোগটি মোকাবেলায় সংক্রামক রোগ সংশ্লিষ্ট একটি আইনের প্রয়োগের দিকে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। এ আইনের বিধান না মানলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।

এই গণবিজ্ঞপ্তি জারির কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, বিদেশ থেকে আসা অনেক প্রবাসী এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ কোয়ারেন্টিনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছেন না এবং তারা অনেকের সংস্পর্শেও যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে নিয়ম না মানলে এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করলে এই আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষমতা

এই আইনের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতর বসতবাড়ি, হাসপাতাল-ক্লিনিক বা অন্য যেকোন স্থানে কোন করোনা রোগী বা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পেলে সেখানে পরিদর্শন করাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

এমনকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা বাড়িতেই কোয়ারেন্টিন কিংবা আইসোলেশনে রাখতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনে দেশের ভেতরে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্লেন ইত্যাদি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তাছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এবং ওই স্থানে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যদি অন্য কোন ব্যক্তির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে সাময়িকভাবে অন্য যেকোন স্থানে স্থানান্তর বা জন বিচ্ছিন্নও করা হতে পারে।