রবিবার , ১১ নভেম্বর ২০১৮ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

জয়পুরহাটে একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যুর তদন্তে তিনটি দল

Paris
নভেম্বর ১১, ২০১৮ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

জয়পুরহাটের আরামনগর মহল্লায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে একই পরিবারের আট জন নিহতের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আগুনের সূত্রপাত নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন না অনেকেই।
এলাকাবাসীর অভিমত, বৈদ্যুতিক গোলযোগে নয়, বরং অন্য কোনোভাবে ওই বাড়িতে আগুন দিয়ে পরিবারের আটজনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাদের এ দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এদিকে ঘটনা তদন্তে পৃথকভাবে গঠিত তিনটি তদন্ত দল মাঠে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ঢাকা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল শনিবার সকাল থেকে তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-সহকারী পরিচালক মো. ছালাহ উদ্দিন। সঙ্গে আছেন পরিদর্শক আব্দুল খালেক ও পুলক কুমার গোস্বামী। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্যও নেন।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত দলের নেতৃত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া বিনতে তাবিব এবং জেলা পুলিশের তদন্ত দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়।

শনিবার ঘটনাস্থল শহরের আরামনগরে নিহত দুলাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল ধ্বংসস্তুপ পরিদর্শন করছেন। বুধবার রাতে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সব আসবাবপত্র ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে। নিহত দুলালের ছোট ভাই পাশের মহল্লা মাদারগঞ্জ থেকে এসেছেন বাড়িটি পরিষ্কার করার জন্য। এ সময় সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে।
সেখানে কথা হয় প্রতিবেশী কালাই অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারী মেহেদি হাসান রতনের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘গত বুধবার রাতে অগ্নিকান্ডের সময় আমিসহ ৫-৬ জন প্রতিবেশী সর্বপ্রথম দুলালদের বাড়িতে ছুটে আসি। সেখানে এসে দেখি, আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের তাপ ছিল খুব বেশি। তাপ বেশি থাকায় আমরা কাছে আসতে পারছিলাম না।’ তার দাবি আগুনের রঙ দেখে তার মনে হয়েছে বাইরে থেকে কোনও দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। পরে লোহার শাবল দিয়ে ওই বাড়ির দক্ষিণ পাশের জানালা ভেঙে বাড়ির মালিক দুলাল, তার পুত্রবধু পরীনা বানু, জমজ নাতনি হাসি-খুশি ও দেড় বছরের নাতি তাইমুল ইসলামকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে তারা জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। পরে জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি’র ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল এসে বাড়ির ভেতর থেকে দুলালের স্ত্রী মোমেনা বেগম, ছেলে মোমিন ও নাতনি মুনিরা আখতার বৃষ্টির মরদেহ উদ্ধার করে।

প্রতিবেশী জুয়েল বাবুর্চি জানান, চিৎকার শুনে তিনিও ছুটে এসেছিলেন আগুন থেকে পরিবারটিকে উদ্ধার করার জন্য। আগুনের তাপ বেশি থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হয়েছে। প্রতিবেশী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না এটি দুর্ঘটনা। মনে হচ্ছে এ ঘটনার ভেতর কোনও রহস্য আছে।’

বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে এমন কথা মানতে নারাজ নর্দান ইলেকট্রিসি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) জয়পুরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদুল হাসান। তিনি দাবি করেন, ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বাড়িটিতে আগুন ধরলে প্রথমেই বিদ্যুতের মিটারে বিস্ফোরণ ঘটতো অথবা মিটার পুড়ে যেত। কিন্তু মিটার এবং ট্রান্সফরমার অক্ষত আছে।’ মোবাইল ফোনে মিটারের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়িটিতে অন্য কোনও উৎস থেকে আগুন লাগতে পারে যা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।’

তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে ঢাকা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দলের প্রধান উপ-সহকারী পরিচালক ছালাহ উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে এটি নিছক দুর্ঘটনা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটিতে বিদ্যুতের খুবই কমদামি বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি তারগুলো ওয়ারিং করা ছিল না, ঝুলন্ত ছিল। আর প্লাস্টিকের আসবাব পত্র বেশি থাকায় আগুন যেমন বেগবান হয়েছে ঠিক তেমনি ধোঁয়ায়ও আচ্ছন্ন হয়েছে। সবকিছু মিলে আমাদের মনে হয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।’

জেলা পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত দলের প্রধান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে ঘটনাটি নাশকতা নয়। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সৃষ্ট আগুন ওই পরিবারের আট জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হলে বোধ হয় এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। তদন্ত শেষ হলেই এ ঘটনা নিয়ে সন্দেহের অবসান ঘটবে।’

স/শা

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর