সোমবার , ২২ মে ২০২৩ | ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

জ্ঞানের পরিপক্কতার অপর নাম ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

Paris
মে ২২, ২০২৩ ১:২৮ অপরাহ্ণ


মোঃ কায়ছার আলী :

প্রশিক্ষণ মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং বিবেককে আলোকিত করে। ব্রাকের পেইস প্রোগ্রামের আওতায় ২০১৩ সালে বি,এল,সি বাঁশেরহাট দিনাজপুরে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নি:সন্দেহে (৫+৫) ১০ দিন ছিল আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। তাদের সকল প্রশিক্ষণ অবশ্যই কোয়ালিটিতে সেরা। এজন্য তাদের ট্রেনিং ম্যানুয়াল, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, টিপস, কৌশল, কিছু অনন্য অসাধারণ উদাহরণ নোট করে স্বযত্নে রেখেছি।

প্রশিক্ষণে “মারিয়ার কাহিনী “টপিকটি ছিল ভিন্নধর্মী বিষয়। আজকের আমাদের সমাজে কিছু কিছু সামাজিক ,রাজনৈতিক,অরাজনৈতিক ,ধর্মীয় বড় ছোট্ট বিষয় নিয়ে তর্ক,বিতর্ক চলে। ভিন্নমতকে আমরা পুরোপুরি মেনে না নিলেও অশ্রদ্ধা করব না। ছোট্ট একটা কাহিনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরছি। এই লিখাটি ম্যাচিউরদের জন্য, কেননা আপনাদের সাথে আমার ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। কেন আমি একটু খোলামেলা লিখলাম। মারিয়া নামে ২০ বছরের এক সুন্দরী মেয়ে ছিল। সে ছিল খুব গরীব। সে যে গ্রামে বাস করতো তার পাশেই ছিল এক বড় নদী।

নদীর অপর প্রান্তে জন নামে এক যুবক বাস করতো, যাকে মারিয়া গভীরভাবে ভালবাসত। সেই নদীটি ছিল প্রশস্ত ,খরস্রোতা এবং সেখানে কুমিরও থাকতো। একদিন মারিয়া শুনলো জন খুবই অসুস্থ এবং যে কোন সময় মারা যেতে পারে।এই কথা শুনে মারিয়া খুবই বিচলিত ও আতকিংত হলো কেননা সে জনকে গভীরভাবে ভালবাসত। তৎক্ষনাৎ মারিয়া চিন্তা করল জনের কাছে যেভাবেই হোক সে যাবে কারণ জন যেভাবে অসুস্থ তাতে যে কোন সময়ই সে মারা যাবে। মারিয়া জনকে দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে নদীর ধারে ফেরীঘাটে গেল। ঘাটের ফেরীটি চালাত মাইকেল। মারিয়া যখন ফেরী পারাপার হতে চাইল তখন মাইকেল জানাল পার হতে হলে তাকে ২০০ টাকা দিতে হবে।

তখন মারিয়া বলল তার নিকট এখন ২০০ টাকা নেই তবে পরে যেভাবেই হোক এই টাকা সে মাইকেলকে পরিশোধ করবে। মাইকেল এতে তাকে নদী পার করতে রাজি হল না,মারিয়া তখন মাইকেলকে খুব অনুরোধ করলো নদী পার করে দেওয়ার জন্য কেননা জন ভীষণ অসুস্থ এবং হয়তো মারা যেতে পারে। মাইকেল পুনরায় তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করল এবং বললো আমি তোমাকে এল শর্তে নদী পার করতে পারি তা হল আমার ইচ্ছা পূরণে (কু-প্রস্তাব) তোমাকে রাজী হতে হবে। মারিয়া এটা শুনে হতভম্ব ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তার গ্রামে ফিরে যেতে হবে চিন্তা করে সে এখন কি করবে? পথিমধ্যে তার চাচাত ভাই জ্যাকির সাথে দেখা হল এবং তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। জ্যাকি মারিয়ার কথা শুনে বলে এতে আমার কিছু করার নাই। এটি তোমার সমস্যা,আমাকে এর মধ্যে জড়িয়োনা,আমার এতে কিছু করার নেই বলে জ্যাকি তার গন্তব্যের দিকে চলে যায়। মারিয়া এখন কি করবে তা কিছু বুঝে উঠতে পারল না।

সে মাইকেলের কু-প্রস্তাব মানসিকভাবে ঘৃণা করে কিন্তু জনকে সে গভীরভাবে ভালবাসে এবং চিন্তা করে, বিলম্ব হলে হয়ত জনকে আর দেখতে পাবে না। যে কোন ভাবে হোক তাকে নদী পার হতে হবে এবং শেষে মাইকেলের কাছে ফিরে গিয়ে তার কু-প্রস্তাবে রাজী হল। অত:পর সে নদী পার হল ও অস্থিরভাবে জনের বাড়িতে পৌঁছাল।মারিয়া জনকে সেবা শুশ্রুষা করতে লাগলো এবং শ্রীঘই জনের বিপদ কেটে গেল এবং কিছুটা সুস্থ হয়ে ঊঠল। পরবর্তীতে একদিন জন মারিয়াকে জিজ্ঞাসা করল কিভাবে সে নদী পার হল এবং টাকাটা বা কোথায় পেল।

তখন মারিয়া সম্পুর্ণ ঘটনাই জনকে খুলে বলল।ঘটনা শুনে জন খুবই রাগান্বিত ও উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে উঠল এবং মাইকেলের প্রস্তাব রাজী হওয়ার জন্য মারিয়াকে তিরস্কার করতে লাগলো। এ পর্যায়ে সে মারিয়াকে বলল আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় এবং এই মুহুর্তে আমার বাড়ী থেকে বের হয়ে যাও।মারিয়া ভীষণ মন:কষ্ট নিয়ে ফেরি ঘাটে এল,পথিমধ্যে প্রতিবেশী পিটার এর সংগে দেখা হয়।যা যা ঘটেছিল পিটারকে তার সবই বলল,পিটার এসব শুনে খুবই রেগে গেল এবং তার মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠল।সে উত্তেজিত হয়ে জনের বাড়ীতে গিয়ে অসুস্থ জনকে বিছানা থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করল। গল্পটি পাঠশেষে শুরু হল বিতর্ক।

পাঁচটি চরিত্র ( মারিয়া, জন, মাইকেল, জ্যাকি এবং পিটার) কে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সবাই নিজ নিজ যুক্তি পেশ করল।কেউ কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না,সবাই নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অনড় এবং অটল। আপনি একবার ভাবুনতো এধরণের লোক আমাদের সমাজে কি নেই,আছে।কেউ বিপদে এগিয়ে আসে, কেউ চুপচাপ থাকে, কেউ এড়িয়ে চলে, কেঊ ঝাপিয়ে পড়ে, কেউ ধান্ধাবাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভিন্ন মনোভাব,চিন্তার ধরণ বা মানসিকতাকেই দৃষ্টিভঙ্গি বলে। একটা বিষয়কে কে কিভাবে দেখছে, ভাবছে, নিচ্ছে সেটাই হল দৃষ্টিভঙ্গি।

সব মানুষের মনোজাগতিক নীতি আদর্শ এক নয়। তাই সে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করে।মস্তিস্ক নামক হার্ডওয়্যার আর মন নামক সফটওয়ার ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় আমরা এক হতে পারছি না। অন্যের মত এবং আমার মতামত এক নাও হতে পারে, এজন্য কাউকে বন্ধু মনে না করলেও শত্রু ভাবব না। পরিপক্ক মানুষের এটাই করা উচিৎ।

সর্বশেষ - মতামত