সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
বিশ্বের এক অদ্ভুত প্রাণী টারিটোপসিস ডোরনি। এটা সাধারণত ‘অমর জেলিফিশ’ নামে পরিচিত। মানব জাতির জন্য এক সম্ভাবনাময় রহস্য হয়ে উঠেছে এই জেলিফিশ। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জেলিফিশটির মধ্যে এমন এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাকে বয়সের প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখে। তার জীবনচক্রটি একেবারে বিপরীত দিকে চলতে সক্ষম, অর্থাৎ এটি এমনভাবে তার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে তার বয়সের কোনো ছাপ পড়ে না।
খবর অনুসারে, টারিটোপসিস ডোরনি এমন একটি প্রাণী, যা যখন তার জীবনে কোনো পরিবেশগত চাপ বা শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়, তখন এটি তার জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে যেতে না গিয়ে পুনরায় আগের পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি ‘ট্রান্সডিফারেনশিয়েশন’ নামে পরিচিত, যেখানে জেলিফিশটি তার প্রাপ্তবয়স্ক কোষগুলোকে আবার নতুন করে রূপান্তরিত করতে পারে। ফলে, একে বলা হয় অমর প্রাণী। কারণ এর কোষের বৃদ্ধির চক্র কোনো সময়সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এই প্রক্রিয়া এতই জটিল এবং আশ্চর্যজনক যে এটি বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তারা মনে করছেন, এই বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারলে মানবজাতির বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বা বার্ধক্য রোধ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে।
১৮৮৩ সালে প্রথমবারের মতো টারিটোপসিস ডোরনি জেলিফিশটির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অবহিত হন। ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে এই জেলিফিশের সন্ধান পাওয়ার পর, এটি আজ পৃথিবীর নানা মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এর রহস্য উদ্ঘাটনের কাজটি চলমান। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই জেলিফিশের অমরত্বের প্রকৃতি যদি একদিন পুরোপুরি বুঝে ফেলা যায়, তাহলে তা মানুষের স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করতে একটি নতুন দিক খুলে দিতে পারে। বার্ধক্য প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতির জন্য এটি হতে পারে এক অসাধারণ সুযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টারিটোপসিস ডোরনি এক অদ্বিতীয় জীবনের চক্র গঠন করতে পারে, যা সম্ভবত অনন্তকাল ধরে চলতে পারে। তার কোষগুলো এমনভাবে নিজেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম, যে তার জীবনচক্র কোনো নির্দিষ্ট সীমায় আটকে থাকে না। এর মানে হলো, এটি কখনোই বার্ধক্যের শিকার হয় না, এমনকি পক্ক বয়সের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের মুখোমুখিও হয় না।
এছাড়া, বিজ্ঞানীরা যদি এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানেন, তাহলে তারা হয়তো এমন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারবেন যা মানুষের জীবনের মেয়াদ দীর্ঘ করতে সাহায্য করবে এবং শরীরের কোষগুলোর পুনর্জন্মের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। ক্যানসারসহ আরও নানা ধরনের রোগের চিকিৎসায় এর প্রয়োগ থাকতে পারে, যা একদিন মানব চিকিৎসাব্যবস্থায় এক বিপ্লব আনতে পারে।
তাত্ত্বিকভাবে টারিটোপসিস ডোরনি জেলিফিশের কোষের বৃদ্ধির চক্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে। আর তাই জেলিফিশটির মধ্যে বার্ধক্য আসে না। এই জেলিফিশের কথা প্রথম ১৮৮৩ সালে প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। ভূমধ্যসাগরে আবিষ্কৃত এই জেলিফিশ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মহাসাগরে পাওয়া যায়। জেলিফিশের এমন অমরত্বের রহস্য উদ্ঘাটন করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন