জিনজিয়াংয়ে বিপুল জন্মহার হ্রাসের বিষয়টি স্বীকার করেছে চীন

সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে বিপুল জন্মহার হ্রাসের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন চীনা কর্মকর্তারা। জিনজিয়াংয়ের জন্মহার ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে স্বীকার করা হয়েছে। তবে সেখানে নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ ও গণহত্যার পশ্চিমা রিপোর্টকে অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।

জিনজিয়াং সরকার জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের প্রশ্নের জবাবে সিএনএনকে ছয় পৃষ্ঠার ফ্যাক্স প্রেরণ করেছে। যেখানে বেইজিং কর্তৃক উইঘুর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের টার্গেট করে একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ ক্যাম্পেইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিনজিয়াংয়ে প্রায় এক কোটি সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর বসবাস।

জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিযোগ উঠেছে। মুসলমান জনসংখ্যা সীমিত রাখতে উইঘুর নারীদের বিস্তৃত ও কাঠামোগতভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি গর্ভপাতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার নারী। সম্প্রতি মার্কিন নথিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে বেইজিং বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এই প্রথম তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জিনজিয়াংয়ে জন্মহার ব্যাপকভাবে হ্রাসের কথা স্বীকার করল।

জিনজিয়াংয়ে চীন সরকার কর্তৃক উইঘুর মুসলিমদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এটি প্রথম অভিযোগ নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুসারে, এই অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রেখেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এসব ক্যাম্পে নিপীড়নের বহু অভিযোগ রয়েছে। তবে বেইজিং কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে থাকে। সন্ত্রাস দমনে এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি তাদের।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘুদের মধ্যে জন্মহার হ্রাস করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসাবে কিছু উইঘুর নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে এবং বন্ধ্যা হতে বাধ্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি জিনজিয়াং সম্পর্কিত গবেষণার জন্য পরিচিত ‘ভিকটিমস অব কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর সিনিয়র ফেলো অ্যাড্রিয়ান জেনজের একটি নিবন্ধের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। তিনি তাঁর নিবন্ধে এই অঞ্চলে বন্ধ্যাকরণের যেসব চীনা সরকারি নথি আছে সেগুলোর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে বন্ধ্যা করার হার ছিল ৫০ জন। ২০১৮ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৫০ জন।

জেনজ বলেছিলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো জাতিসংঘের ‘গণহত্যার’ সংজ্ঞায়নের অধীনে এসেছে। কোনো একটি গোষ্ঠী নির্মূল করার উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক জন্ম রোধ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া গণহত্যার শামিল।’

তবে সিএনএনের এই রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় জিনজিয়াং সরকার গণহত্যার অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেছ। পরিবর্তে তাঁরা দাবি করেছে, বিগত দশকে উইঘুর জনসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জেনজের রিপোর্ট জিনজিয়াংয়ের আসল পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সরকারের মতে, ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জিনজিয়াংয়ের জনসংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি বা প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উইঘুর জনসংখ্যা এই অঞ্চলের গড় হারের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উইঘুর এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং স্বার্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত হয়েছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ