জাহালমের ক্ষতিপূরণের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

ভুল আসামি হিসেবে তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ব্র্যাক ব্যাংককে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে ব্যাংকটি। আজ সোমবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান এ আবেদন করেন।

জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোয় তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এক মাসের মধ্যে এই টাকা জাহালমকে দিতে বলা হয় রায়ে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।সালেকের বদলে জাহালমকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা অন্যতম ভূমিকা রাখেন বলে রায়ে আদালত উল্লেখ করেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে : ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।

পরে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চান। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে।

পরে জাহালম-প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট ও সব ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১৭ এপ্রিল জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী, তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুদকের প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক ছিলেন।

বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৩৩ মামলার মধ্যে মোট ২৬টিতে ‘ভুল’ আসামি হয়ে জেল খাটার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত। এরপর জাহালমকে ২৬ মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে গত বছর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন