জামায়াত ছাড়তে চায় বিএনপি

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়তে চায় বিএনপি। এই প্রথম গত শনিবার ভার্চুয়ালে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াত ছাড়া নিয়ে আলোচনা হয়। মাত্র দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মুহূর্তে জামায়াত না ছাড়ার পক্ষে মত দেন। বাকি সব সদস্যই জামায়াত ছাড়ার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানান। সূত্র জানায়, জামায়াতের কারণে বিএনপি অতীতে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তাও তুলে ধরা হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলে ভবিষ্যতে বিএনপির রাজনীতি আরও হুমকিতে পড়বে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মতামত দিলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চুপচাপ শুনছিলেন। এ ব্যাপারে শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতামত নেওয়া হবে। তিনি সবুজ সংকেত দিলেই জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দেবে বিএনপি। জামায়াত ছাড়া ইস্যুতে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা আমি বলব না। তবে জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোট গঠন করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

জানা যায়, বিকাল ৫টা থেকে টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ভার্চুয়ালে বৈঠক করেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা। বৈঠকে জামায়াত ইস্যু ছাড়াও করোনা দল পুনর্গঠন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়- প্রতি বৈঠকে একজন সদস্য এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা করবেন। অন্যরা এর পক্ষে মতামত বা যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তুলে ধরতে পারবেন। পরপর গত কয়েকটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এভাবে আলোচনা চলছে বলেও জানা যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জামায়াত ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়া আগের অবস্থানে নেই। তিনি এখন বাস্তবতা বুঝতে পারছেন। তিনিও চান বিএনপি ক্লিন ইমেজের ধারায় ফিরে আসুক। এখন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামতে তিনি ‘সবুজ সংকেত’ দিলে যে কোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হবে। স্থায়ী কমিটিতে দু-একজন এর বিরোধিতা করলেও তা ধোপে টিকবে না। সূত্রমতে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একমত হন, আগামীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব কমিটিতে নেতৃত্ব বাছাই হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। কোনো কমিটিই কাউন্সিলবিহীন বা অনির্বাচিত হবে না। বৈঠকে করোনা পরিস্থিতির পরে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়েই মূলত সবাই বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় কমিটি গঠনে অতীতে ভুলত্রুটি নিয়েও কথা বলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও শনিবারের বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন। জানা যায়, বিএনপির মধ্যম সারি ও তরুণ নেতারা শুরু থেকেই জামায়াতকে জোটবদ্ধ করার বিরোধিতা করে আসছে। বিএনপির নতুন প্রজন্মের নেতারা বলছেন, দিলের এই দুরবস্থার জন্য অনেকাংশে জামায়াতই দায়ী। দেশ-বিদেশে বিএনপির ইমেজ সংকটের মূল কারণ জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতার কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বিএনপির সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোও বিএনপিকে ভালো চোখে দেখছে না। তাই যত দ্রুত জামায়াতকে ছাড়তে পারবে ততই বিএনপির জন্য মঙ্গল বলে তরুণ নেতারা মনে করেন।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন