জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে নিজেদের অধীনে নিতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি আইনবিধি, সংবিধান ও সার্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে মতামত দেবে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, এ বিষয়ে তাদের কিছুই বলা হয়নি। ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এনআইডির পরিধি যেহেতু বেড়েছে, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে এ বিষয়ে অধিদপ্তর করলে ভালো হবে।

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ‘এ বিষয়ে এখনো আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এসংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব এলে কমিশন সভা ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।’

সম্প্রতি এনআইডি নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, দ্বৈত ভোটার করা, একজনের এনআইডি অন্যের নামে সংশোধন করে সম্পত্তি বিক্রি ইত্যাদি অভিযোগ আসে। বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের অধীনে নিতে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নাগরিক নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধসহ অন্যান্য বিষয়ের জন্য এটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেওয়া দরকার।

এমন প্রস্তাবের পর বাস্তবতার ভিত্তিতে এটির গ্রহণযোগ্যতাসহ সামগ্রিক বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পরে মতামত তৈরির জন্য অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহমদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি গঠনের অফিস আদেশের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের বদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জসমূহ নির্ণয় ও মোকাবিলার কৌশল সুপারিশ করা, এরূপ স্থানান্তরে কী কী আইন, বিধি ও অবকাঠামো পরিবর্তন করার প্রয়োজন তা নিরূপণ করা এবং এ রূপান্তরে ফলপ্রসূ ফলাফল আসবে কি না, তা মূল্যায়ন করা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে তাদের প্রথম বৈঠক করেছে। কমিটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে। সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসকে (সিআরভিএস) ডাকা হয়েছে। গঠিত এই কমিটি এখন সংবিধান ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-সহ প্রয়োজনীয় বিধিবিধান দেখছে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি আইন এবং সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া আছে সেগুলো পর্যালোচনা করছে কমিটি। কমিটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করবে। এই কমিটি সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মতামত পাঠাবে। প্রসঙ্গত, এর আগে আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এনআইডির অংশীদারিত্ব চেয়ে আরেকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য ও যুগ্ম-সচিব (বিধি ও সেবা এবং আইন) শফিউল আজিম এনআইডির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে কমিটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে মতামত দেবে। এনআইডির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুধু নাগরিকত্ব নয়, ২২ ধরনের সেবার জন্য এনআইডির প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দরকার শুধু ভোটারের বিষয়টা। লোকাল গভর্নমেন্টের দরকার কত জনের জন্ম-মৃত্যু হলো সেটা। পুলিশের দরকার নাগরিকদের লোকেশন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দরকার বিভিন্ন বয়সের মানুষের তথ্য। কমিশন কমিশনের কাজটি করছে, তাদের পার্ট তারা করবে। কেননা, এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা পর্যায়ে সার্ভার স্টেশন করা হয়েছে। কিন্তু এটা যাতে ইনসিকিউরড না হয়, যাতে কেউ বলতে না পারে জাল এনআইডি তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা কিন্তু আছে। আইনবিধি ও সংবিধানে কী আছে তা দেখে সরকারের কাছে মতামত দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে কমিটিকে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরো বলছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটি নিয়ে আলাদা অথরিটি আছে। তাই দীর্ঘমেয়াদি কী ব্যবস্থা হতে পারে, সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিদেশে কীভাবে করা হচ্ছে সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পুুরো এনআইডি কার্যক্রম নয়, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অংশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের অধীনে নিতেই এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজ কী, তা আইন ও বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে সংবিধানেও বলে দেওয়া হয় কার কী কাজ। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি জারিকৃত রুলস অব বিজনেস এবং এলোকেশন অব বিজনেসেও বলা হয়েছে, এসংক্রান্ত কাজের এখতিয়ার ইসির। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এনআইডি কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ বদলাতে হবে কেন?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ , এনআইডির সঙ্গে ভোটার কার্যক্রম সম্পৃক্ত। এনআইডি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা অনেক দক্ষ হয়ে গেছেন। নতুন করে এনআইডির দায়িত্ব অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিলে সরকারের বাড়তি খরচ হবে। এক কাজ দুই প্রতিষ্ঠান করলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। এতে ব্যক্তির গোপনীয়তাও লঙ্ঘিত হতে পারে। এনআইডির মিসইউজও হবে। মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

সূত্র: ইত্তেফাক