রবিবার , ১৪ আগস্ট ২০১৬ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কাল বিলম্ব নয়,বিচার চায় জাতি।। সম্রাট

Paris
আগস্ট ১৪, ২০১৬ ৭:২১ অপরাহ্ণ

১৫ই আগস্ট, যে দিনটিকে নিয়ে বাঙ্গালী জাতীর যত দুঃখ, যত শোক,যত বেদনা, যত অশ্রু। আধুনিক বিজ্ঞান বর্তমান প্রজন্মকে অনেক কিছু দিয়েছে,করেছে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞান কি আদৌও পেরেছে আগস্টের অশ্রুকে সংজ্ঞায়িত করতে। আমি একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে আমার কয়েক মুহুর্তের অধ্যাবসায়ের ফসলকে আমি তুলে ধরার প্রয়াশ করছি। জানি না কতটুকু সফল হবো।

 

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো-আজকের আগস্টের দুঃখ, বেদনা,শোক হলো- ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে/১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে প্রবাহিত হিমোগ্লোবিন, প্লাজমা,লোহিত ও শ্বেত কনিকা যুক্ত মিশ্রিত তরলের একটি প্রতিফলন। যে তরল এখন শুকিয়ে বাঙ্গালীর মনে ব্যর্থতার উন্মেশ ঘটিয়েছে।

 

কি হয়েছিল এই দিন প্রথম প্রহরে? বই, খাতা ও কলম নিয়ে বসে গেলাম বর্তমান উঠতি প্রজন্মকে একটা ছোট সারাংশ উপহার দেওয়ার জন্য। জানি নিজের ব্যর্থতাকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আমিও পারিনা।যখনই লিখতে বসি কেন যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিজের অজান্তে কলমের কালির চেয়ে শত গুনে নিজের চোখের পানির পরিমানটা বেশি হয়ে যায় তা আমার বোধগম্য নয়।তাই ব্যর্থ হয়ে কয়েকবার স্বার্থপরের মত নিজের ইচ্ছাকে লুকিয়ে অপরাধীর মত মাথা নত করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আজ আর নয়। একটা কিছু করতে হবে।

 

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল, এই দিনের প্রথম প্রহরে কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কিছু কুরুচিপূর্ণ, স্বার্থন্বেষী মহলের বিকৃত চিন্তার প্রয়াশে জেনারেল জিয়া এবং খন্দকার মোস্তাকের পরোক্ষ্য মদদে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোধিনায়ক, বাঙ্গালী জাতীর পিতা,স্বাধীন সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর সপরিবারে হত্যা করে বাঙ্গালীর ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। এই দিন তারা একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেনি, একটা পরিবারকে হত্যা করেনি। তারা হত্যা করেছিল একটি জাতীকে, হত্যা করেছিল ৩০ লক্ষ্য শহীদের অমর আত্মাকে, ৩ লক্ষ্য ধর্ষিতা মা বোনের চোখের অশ্রুকে, লাল সবুজের পতাকাকে, ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সবুজ শ্যামল বাংলার সার্বোভৌমত্তকে। কিন্তু তারা হত্যা করতে পারিনি মুজিবের আদর্শকে।

 

যে মুজিব ধর্ষিতাদের পরিচয় দিয়েছেন নিজের মেয়ে হিসেবে, যিনি বাংলা এবং বাঙ্গালীকে ভালোবেছেন নিজের হৃদয় থেকে, তাঁর আদর্শকে বাংলার মাটি থেকে মুছে ফেলা কি এতোই সহজ! যেমনি পারিনি মিরজাফর সিরাজ উদ্দৌলার আদর্শকে হত্যা করতে। আজ মুজিব নেই কিন্তু প্রত্যেক বাঙ্গালী শিশু,যুবক এমনকি বৃদ্ধ বয়সের মধ্যে লুকিয়ে আছে হাজারও মুজিব।

 

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু ঐ নরঘাতকেরা বাঁচতে দেয়নি ছোট শিশু শেখ রাসেলকে যে কিনা তখনো পর্যন্ত জানতো না জীবনের সত্যিকার অর্থ। জানতো না কোনটা পাপ আর কোনটা পুণ্য। তারা হত্যা করেছিল বিবাহ উৎসবে বেড়াতে আসা জনকের একমাত্র নিরীহ ভাই শেখ নাসেরকে।যে কিনা মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত বলেছিল-“আমাকে মারছেন কেন? আমি রাজনীতি করি না, আমি নিরীহ মানুষ”। না, মানুষরূপী পশুরা তাঁর ভাষা বুঝতে পারিনি, নাকি বুঝার চেষ্টা করিনি? সেটা মানুষের বোঝার কথা নয়।তারা বাঁচতে দেয়নি শেখ মনির সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে।যে কিনা আর্তনাদ করে বলেছিল-আমার পেটে সন্তান,আমার সন্তানকে বাঁচতে দিন।অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিল মায়ের লাশের উপর শুয়ে থাকা অবোধ শিশু মাস্টার তাপস।যিনি আজ ব্যারিস্টার তাপস।পাষণ্ডরা হত্যা করেছিল ফুটফুটে শিশু সুকান্তকে। কি দোষ ছিল এই শিশুর ও তো বেড়াতে এসেছিল। ওর দেহ কেন বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হলো? উত্তর নেই এই নরকীয় হত্যাকাণ্ডের কেউ উত্তর দিতে পারেনা।

 

এমনি ভাবে নরঘাতকেরা হত্যা করেছিল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,শেখ মনি,শেখ জামাল,শেখ কামাল সহ মুজিবের পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে। যে মুজিবকে পাকিস্থান সরকারের সেনাবাহিনী হত্যা করতে পারিনি,সেই মুজিবকে কিনা নব্য গঠিত বাংলার মস্তিষ্ক বিকৃত কিছু সেনাবাহিনী হত্যা করলো!যিনি কিনা বঙ্গভবনে না থেকে নিজের বাসাতে থাকতেন। কারণ তিনি জানতেন যে যাদের মুক্তির জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য,অধিকার আদায়ের জন্য তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন সেই বাঙ্গালীরা তাকে হত্যা করতে পারে না। বাংলার বাঙ্গালী তাকে হত্যা করিনি,করেছে হায়েনার চেয়ে হিংস্র পশুর চেয়ে জঘন্য কিছু স্বার্থন্বেষীরা।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ ইতিহাস বিকৃত ঘটনা যেটা কিনা হিটলারের সৈরাতান্ত্রিক সময়ও ঘটানোর সাহস ছিল না। এতো বড় মহান নেতাকে হত্যার পরও ঘাতকেরা তাঁর লাশকে পর্যন্ত ভয় পেয়েছিল।তাই তারা তাঁর লাশকে সুপরিকল্পিত ভাবে ঢাকা শরের বাইরে সমাধিত করেছিল। তারা মনে করেছিল মুজিবের লাশ হয়তো কবর থেকে বলে উঠতে পারে-“এবারের সংগ্রাম, রাজাকার/ঘাতক নির্মুলের সংগ্রাম”। মুজিবের সমাধি দেখে জনতা হয়তো একাত্তরের মত গর্জে উঠতে পারে।

 

 

১৫ই আগস্ট সকাল, সেদিন আকাশ কেঁদেছিল,বাতাস কেঁদেছিল,কেঁদেছিল বাংলার মানুষ।

 

ঘাতকেরা এখানেই বসে থাকেনি।তারা নিজেদেরকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে থাকে।৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। তারা জানতো জাতীয় নেতাদের মস্তিষ্কে সুপ্ত আছে মুজিবের আদর্শ।

 

এমনকি ১৫ই আগস্টের খুনিদের যাতে কোন দিন বিচার না হয় তাঁর জন্য তারা “ইন্ডেমনিটি অ্যাক্ট” নামক কালো আইন প্রণয়ন করলো। ঘাতকেরা বাংলার ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চাইলো, ভুলিয়ে দিতে চাইলো এক মহান নেতাকে যাকে কিনা খুন করে কারো রেহায় পাওয়ার কথা নয়।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্য হত্যা আছে বলে কেউ মনে করেন না। এই ঘটনার পর বিশ্ববাসী বাঙ্গালীকে বেইমান,বিশ্বাসঘাতক বলে চেনে। তারা মনে করে যারা মুজিবের মত জনপ্রিয় মহান নেতাকে হত্যা করতে পারে তাদেরকে আর যাই হোক বিশ্বাস করা যায় না।এমনকি ১৯৮১ সালে যখন মুজিব কণ্যা শেখ হাসিনা জার্মানি থেকে দেশে ফিরবেন তখন ঐ দেশের বিমান বন্দরে তাকে এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করেছিলেন-কোথায় যাবেন? উত্তরে শেখ হাসিনা বলেছিলেন-বাংলাদেশ। তখন ভদ্রলোক বলেছিলেন-যে দেশের মানুষ মুজিবকে হত্যা করতে পারে সে দেশে না যাওয়াই ভালো। কিন্তু তিনি জানতেন না উনি যার সাথে কথা বলছেন ইনিই মুজিবের কণ্যা।

 

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। জাতি আর কালবিলম্ব না করে তাঁর খুনিদের বিচার চাই,বিচার চাই সেই সকল নরপশুদের যারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িকে রক্তে ভাসিয়ে জাতির ইতিহাসকে কলংকিত করেছে।বিচার করতেই হবে।

 

লেখক:

শাহজাহান সিরাজ (সম্রাট)

উপসাহিত্য সম্পাদক,

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সর্বশেষ - মতামত