জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, ওয়াসার নয়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালসমূহ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার ( ২৬ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। সভায় ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করেন মো. তাজুল ইসলাম।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় খালের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের হাতেই ছিল এবং আইনেও তাই আছে। পরবর্তীতে কোন এক সময়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে সেটি ঢাকা ওয়াসার হাতে দেওয়া হয়। এখন দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তারা খালের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজ সকলে মিলে আলোচনায় বসে আমরা ওয়াসা থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের নিকট খালসমূহ হস্তান্তরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, হস্তান্তর কাজটি এখন কিভাবে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় এ লক্ষ্যে আজকেই একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে চারজন করে আটজন, ঢাকা ওয়াসা থেকে চারজন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ সাঈদ উর রহমানকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি করা হয়েছে।

গঠিত এই কমিটি সিটি করপোরেশন কিভাবে কাজ করবে, ওয়াসা কিভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পাদন হবে। কমিটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের আলোকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ এতদিন ওয়াসা দায়িত্ব পালন করেছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই সিটি কর্পোরেশন পালন করবেন। পানি নিষ্কাশনের জন্য জনবল, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে আছে, তাদের সক্ষমতা আছে। দুই মেয়র অত্যন্ত আন্তরিক এবং জনবান্ধব তারা একাজ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

রাস্তা খোড়াখুড়ি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর আধুনিক শহরে ইউটিলিটিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পাইপলাইন স্থাপন করতে হয় এবং সময় সময় ক্যাপাসিটির জন্য পরিবর্তনও করতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে মেয়রসহ বিশ্বব্যাংকের সাথে বৈঠক হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এসময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। আমরা দুই সিটির মেয়র চেয়েছিলাম ঢাকা শহরের খালগুলো আমাদের আওতায় দিয়ে দিতে। আজ সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা মনে করি জনগণের জলাবদ্ধতা নিয়ে যে দুর্ভোগ আমরা করবো জনগণকে এই জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য”।

দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “আজকে আমরা দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ঢাকাবাসী দুর্ভোগে নিমজ্জিত ছিল। আমি আশাবাদী সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কাজের মাধ্যমে অচিরেই ঢাকাবাসীকে এর সুফল দিতে পারবো।

এসময় এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং এমন পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, “১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির একটি সিদ্ধান্ত ছিল ওয়াসাকে দিয়ে দেয়া। আমরা যখন ২০০৯-১০ সালে দায়িত্বে আসার পর ২০১২ সাল থেকে অনেক বার বলেছি এটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক। আজকে সেটার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে”।

এর আগে সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, নগরবাসীকে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর উপহার দিতে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ তার মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে গতবছরের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দুই-তিনগুণ বেশি হবে এমন আভাস দেওয়া সত্বেও এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই বললেই চলে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পানি নিষ্কাশন, বর্জ্যসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা আছে তা খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রণালয়ের ও দুই সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

সূত্র: ইত্তেফাক