তুরস্কে ভোট শেষে চলছে গণনা

জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এরদোয়ানের বিরোধীশিবির

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষে এখন গণনা চলছে। এই ভোটে দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুর মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

তুরস্কের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সংবাদদাতারা বলছেন, রোববারের ভোটাভুটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবেই শেষ হয়েছে। আঙ্কারা থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি রেসুল সের্দার বলেন, প্রথম রাউন্ডে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সত্ত্বেও রোববারের ভোটে কিলিচদারোগলুর সমর্থকদের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে।

এই সমর্থকদের একজন আলী মার্ত। তিনি বলেন, পুরো দেশ ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। কারণ তারা দেশে মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন চায়।

অন্যদিকে, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমর্থকদেরও। প্রথম দফার ভোটে তৃতীয় স্থানে থাকার জাতীয়তাবাদী দলের নেতা সিনান ওগানের সমর্থন পাওয়ায় জয়ের পাল্লা কিছুটা ভারী হয়েছে তুর্কিশ নেতা এরদোয়ানের।

রোববার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছে বিকেল ৫টায়। তুরস্কের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মতো রান-অফ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারে দেশটিতে ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষ।

তুরস্কে বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশের ব্যবস্থা নেই। তবে প্রাথমিক ফল আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্বাচনের ফল গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা রয়েছে।

বিদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকরাও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিশ্বের ৭৩টি দেশ থেকে প্রায় ১৯ লাখ তুর্কি নাগরিক ভোট দিয়েছেন।

• প্রথম দফার ভোটের ফল

গত ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।

আর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত সিনান ওগান পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, প্রথম দফার নির্বাচনে তুরস্কের ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মাঝে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

• রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

> একে পার্টি নামে পরিচিত তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলভমেন্ট পার্টি নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্ট জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

> ৬৯ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনেতা তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে ৯ বছর প্রেসিডেন্ট এবং ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

> ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন তিনি।

> বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এরদোয়ান।

> ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট আর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে এবারের এই নির্বাচনর তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

• কেমাল কিলিচদারোগলু

> দেশটির ছয়দলীয় জোট ন্যাশন অ্যালায়েন্সের হয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।

> এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

> রাজনীতির মাঠে পা রাখার আগে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময় দেশটির সামাজিক বীমা ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

> তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল কুর্দিপন্থী এইচডিপির সমর্থনে ছয়-দলীয় ন্যাশন অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

> তিনি তুরস্ককে একটি শক্তিশালী সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।