জনপ্রতিনিধিদের প্রতিবাদেও বন্ধ হচ্ছে না ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন

পুঠিয়া প্রতিনিধি :
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। এতেও কাজ না হওয়ায় উপজেলার মাসিক সভাও বর্জন করেছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন।

জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ পুকুর খনন কারিদের পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বিশেষ সমঝোতা রয়েছে। সে সুবাদে প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে চললে পুকুর খননকাজ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুঠিয়া থানার তথ্য মতে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খননকাজ শেষ হয়েছে। জিউপাড়া, ভালুকগাছি, শিলমাড়িয়া, বেলপুকুর, বানেশ্বর ইউনিয়নের ২১টি স্থানে একনও পুকুর খননকাজ চলছে।

এ ছাড়া আরও অর্ধশতাধিক স্থানে খনন শুরু করতে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তির অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমি রহমান বলেন, এ বছর ব্যাপক হারে পুকুর খনন শুরু হয়েছে। এখন ফসলি জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। খননকারীরা কোনো বাধাই মানছেন না। অভিযোগ, মানববন্ধন করা পরও পুলিশ ও প্রশাসন নীরব রয়েছেন।
মৌসুমি রহমান আরও বলেন, ইতিমধ্যে ফসলি খেত রক্ষা ও পুকুর খনন বন্ধে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, আবেদন, সভা-সমাবেশ করেও পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গত মাসে উপজেলা পরিষদে মাসিক ও আইনশৃঙ্খলা সভা বর্জন করেছেন।

মঞ্জুর রহমান নামের একজন চাষি বলেন, এক শ্রেণির মাছচাষিরা বেশি টাকার ইজারার প্রলোভন দেখাচ্ছেন। আর বিনা খরচে বছর শেষে টাকা পাওয়ার লোভে তাঁরা তিন ফসলি জমি দিচ্ছেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে মাছ চাষিরা ফসলি খেতে পুকুর খননকাজ শুরু করেন।

মঞ্জুর রহমান আরও বলেন, ‘খনন করা মাটি বহন করছে শত শত ট্র্যাক্টর। ট্র্যাক্টরগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিক জানিয়েছি। তবে রহস্যজনক কারণে কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।’

তবে উপজেলার বেলপুকুর থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, তিনি এই থানায় নতুন যোগদান করেছেন। কোথাও পুকুর খনন হচ্ছে এমন তথ্য জানা নেই। তবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, কোথাও খনন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুঠিয়া থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, কোথাও নতুন করে পুকুর খনন হচ্ছে না। কয়েকটি স্থানে পুরোনো পুকুরের সংস্কার কাজ হচ্ছে।

ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে জনপ্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। সেই সঙ্গে উপজেলার মাসিক সভাও বর্জন করেছেন। এমন প্রশ্ন ওসি বলেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। তবে প্রশাসনের এককভাবে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসা জরুরি।