সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার হওয়া নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের সেই কিশোর ছেলে তাহরীমকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার এই রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে জানা গেছে। আগামী রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। অপরদিকে উদ্ধার হওয়া অপর দুই শিশুকে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এই উপ-কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে আটকের পর করিমের ছেলে তাহরীমকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এখনো শুনানি হয়নি। এছাড়া অপর দুই শিশুকে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে লালবাগ থানাধীন আজিমপুরের ২০৯/৫ নম্বর পিলখানা রোডের একটি ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পরে ওই বাসা থেকে তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ হোসেন ওরফে শমসের উদ্দিন ওরফে আব্দুল করিম (৪০) নামে এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও করিমের ১৪ বছর বয়সী কিশোর ছেলে তাহরীম কাদেরীকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় দুই নারী জঙ্গি ও এক পুরুষ জঙ্গি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে পুরুষ জঙ্গি মারা গেলেও আহত অবস্থায় অপর দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া পালিয়ে যাওয়ার সময় অপর এক নারী জঙ্গিকে আটক করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, পুলিশ ওই জঙ্গি আস্তানার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেল পুলিশের ওপর ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে কব্জা করতে সক্ষম হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানায়, এ ঘটনায় রবিবার রাতে মামলা দায়েরের পরদিন সোমবার তাহরীম কাদেরীকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে সেদিন আদালতে শুনানি হয়নি। তাহরীমকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। বৃহস্পতিবারও রিমান্ড শুনানি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী রোববার তাহরীমের রিমান্ড শুনানি হতে পারে।
স্বজনদের কাছে অপর দুই শিশু
আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আরও দুই শিশুকে উদ্ধার করেছিল অভিযান পরিচালনকারী পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। উদ্ধারের পর তাদের তেজগাঁওয়ের উইমেন অ্যান্ড ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুই শিশুকে তাদের স্বজনরা নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানালে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি মিডিয়া) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘শিশু দুটির পরিচয় যাচাই বাছাই শেষে স্বজনদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া দুই শিশুর একজন জুনায়রা নূরানী বিনতে জাহিদ ওরফে পিংকী মিরপুরের রূপনগরে পুলিশ অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের মেয়ে। জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলাও ওই জঙ্গি আস্তানায় ছিলো। তবে অভিযানের আগে সে পালিয়ে যায়। ৮ বছর বয়সী পিংকীকে তার নানা মমিনুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হওয়া এক বছর বয়সী অপর শিশু সাবিহা জামান ওরফে রুহী জঙ্গি বাবা বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ওরফে জামান।
তার মায়ের নাম শায়লা আফরিন। শায়লা আফরিন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাশারুজ্জামান পলাতক। তাদের সন্তান রুহীকেও তাদের নানা-নানীর কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন