ছেলেকে জঙ্গি দলে পাঠানো মা বললেন, ‘আব্বু তুমি ভুল পথে আছ’

 

 

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছে এমন ৫৫ তরুণের হালনাগাদ তালিকা করেছে র‍্যাব। ১৯ জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া এই তরুণদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। নিখোঁজ এসব তরুণকে খুঁজে না পাওয়া সমাজের জন্য বড় হুমকি।আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং একজন নারী সদস্যের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ঘটনা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী আব্দুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (৪০) ও আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (৩২) এবং দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত রনি মিয়া (২৯)। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় তিনটি উগ্রবাদী বই, নয়টি লিফলেট ও দুটি ব্যাগ।

সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলি নামে এক নারী জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসার কথা জানান। তার ছেলে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানকে (১৫) আট মাস আগে তিনি নিজেই তথাকথিত হিজরতের নামে জঙ্গি প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বর এমিলিকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে রেখে চারদিন ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে র‍্যাব। তিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দিয়ে নিজের ছেলেকে ভুল পথ থেকে ফিরে আসার আকুতি জানান।

র‍্যাবের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা যে ৫৫ জনের তালিকা দিয়েছি, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুটি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ১০ জনকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়। ঘরছাড়া ৫৫ তরুণ একসঙ্গে থাকার কথা নয়, তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমাদের অভিযানের ব্যাপারটি বুঝতে পেরে হয়তো তারা দুটি ক্যাম্প থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। পরে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল তাদের মধ্যে চার তরুণকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। এ ছাড়া কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আরেক তরুণ নিজ থেকেই বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর পাঁচটি অভিযান চালিয়ে আরো ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রকাশিত নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্করের নাম রয়েছে। তাকে তথাকথিত হিজরতের নামে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে জঙ্গিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন তার মা আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলি। পরে গত ৫ নভেম্বর মা এমিলিকে উদ্ধার করে পরিবারের সান্নিধ্যে ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।
আবু বক্কর গত মার্চে গৃহশিক্ষক আল আমিনের পরামর্শে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আবু বক্কর আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। পরে অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আল-আমিনের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত রনি পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের জন্য আবু বক্করকে বান্দরবানে দিয়ে আসেন। এক পর্যায় ছেলের কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে মা এমিলি চিন্তায় পড়েন। পরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে র‍্যাব সদস্যরা তার সন্ধান পান।বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আব্বু যদি তুমি আমার মেসেজ পেয়ে থাক, বলতে চাই, তুমি চরম একটা ভুল পথে আছ। তুমি তোমার এই মাকে বিশ্বাস করতে পার। তোমার কাছে আমার অনুরোধ, তুমি যদি কখনো তোমার এই মাকে ভালোবেসে থাক, তাহলে তুমি দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ করবে না, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা, অন্যায় কাজে সামিল হবে না। আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ কর। প্রশাসন সদয় হবে।’তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি মাস্টার্স পাস করেছি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে বিমান বাংলাদেশে চাকরি করেছি খণ্ডকালীন। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, চরম ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে সন্তানকে দিয়েছিলাম। এ কারণে আজকে আমার আদরের সন্তান বান্দরবানের পাহাড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় আছে। আমি জানি না আমার সন্তান বেঁচে আছে কি না? জানি না আমি কখনো দেখতে পাব কি না? এটা আমার মা হিসেবে চরম ব্যর্থতা। শিক্ষিত মেয়ে হয়েও আমি বুঝতে পারিনি। আমি বুঝতে পারিনি সঠিক কোনটা, ভুল কোনটা। আমাকে ডিমোটিভেটেড করা হয়েছে। আমার সন্তান আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানকেও করা হয়েছে। আমাকে মিসগাইড করা হয়েছে।তিনি দাবি করেন, জঙ্গিদের গ্রুপ, সংগঠনের নাম, তাদের কর্মকাণ্ড সবকিছু আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল। একটা ভুল বিষয়কে আমার সামনে কোরআন হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বোঝানো হয়েছে সঠিক হিসেবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ