ছিল বছরটিকে মনে রাখার মতো উদ্যোগও

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

টেলিকম খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে।

আর এসব উদ্যোগের কিছু দেশের ভবিষ্যতের জন্য, কিছু খাতটির ইকোসিস্টেমের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে দেশের টেলিকম খাতের ইতিহাসে বছরটি কথা উঠে আসবে বারবার।

ফাইভজির রোডম্যাপ : এ বছরই ফাইভজির রোডম্যাপ তৈরিতে হাত দেয় সরকার। বছরের শেষ দিকে এ নিয়ে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি হয়ে যায়। এতে ২০২১ সালের শুরুতে ঢাকায় ফাইভজি চালু করে ওই বছরেই সব বিভাগীয় শহরগুলোতে সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্য রাখা হয়।

এরপর ২০২৩ সালের মধ্যে সব জেলা শহর এবং  ২০২৬ সালের মধ্যে সব উপজেলা, গ্রোথ সেন্টার বা বড় হাটবাজার, বিশ্বরোড ও রেলে ফাইভজি সেবা দেয়া হবে ।

খসড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২০ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফাইভজি নীতিমালা চূড়ান্ত হবে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরকারের অনুমোদন এবং তৃতীয় প্রান্তিকে অপারেটরগুলোকে স্পেকট্রাম দেওয়া হবে । চতুর্থ প্রান্তিকের মধ্যে দেওয়া হবে লাইসেন্স।

মোবাইল ফোনের আইএমইআই ডেটাবেইজ চালু : প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগের পর অবশেষে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি দেশে চালু হয় আইএমইআই ডেটাবেইজ।

মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এবং বিটিআরসি যৌথ উদ্যোগে এই ডেটাবেইজ চালু করে। এই উদ্যোগকে দেশের ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলায় মাইলফলক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন সাবমেরিন ক্যাবলের কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশ : বছরটিতে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের কনসোর্টিয়াম সি-মি-উই ৬-এ যোগ দেয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ। এই ক্যাবল হতে ১০ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নেয়া হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরে কনসোর্টিয়ামের সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দুটি ডিরেকশনে ১০ টেরাবিট বা ১০ হাজার জিবিপিএস নিচ্ছে। একটি কক্সবাজার হতে সিঙ্গাপুরের দিকে আরেকটি কক্সবাজার হতে ফ্রান্সে দিকে। দুটিতেই ৫ টেরাবিট করে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক সেবায় : ২০১৮ সালে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে যাত্রা করলেও বাণিজ্যিক সেবা দেওয়া শুরু করে ২০১৯ সালে। এ স্যাটেলাইটে ২০১৯ সালেই দেশের সব টেলিভিশন যুক্ত হয়।

মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকসহ দুই ডিটিএইচ কোম্পানি আকাশ ও বায়ারের কাছে স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ এবং ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে আয় শুরু হয়। এডিএন ও স্কয়ারসহ আরও দুটি কোম্পানিও এই স্যাটেলাইট হতে সেবা নেয়া ‍শুরু করে। এছাড়া নেপালের একটি ডিটিএইচ কোম্পানি এবং ফিলিপিনের অপর একটি কোম্পানি ৯টি ট্রান্সপন্ডার কেনার জন্যে আলোচনা শুরু করে।

আবার চালু আইপিটিভি : দুই বছর ধরে দেশে আইপিটিভি বন্ধ থাকার চলতি বছর সরকার ২৩টি আইপিটিভির অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে সবার আগে বাণিজ্যিকভাবে আইপিটিভি সেবা চালু করে শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানি বিডিকম।

কোম্পানিটি দেশে প্রথম হিসেবে ট্রিপল প্লে সেবা চালু করে। ফলে তাদের একটি কেবলের মাধ্যমে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ভয়েস কল এবং ইন্টারনেটে টিভি দেখার সুবিধা মেলে। এছাড়াও লিংক থ্রি টেকনোলজিস, আইসিসি কমিউনিকেশন্স, ডিজি যাদু ব্রডব্যান্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) ও প্রিজমা ডিজিটাল কোম্পানি আইপিটিভিসহ কয়েকটি কোম্পানি আইপিটিভি চালু করে এ বছর।

২০১৬ সালের অক্টোবরে কোনো রকম কারণ না দেখিয়ে বিটিআরসি দেশে আইপিটিভি ও ভিডিও অন ডিমান্ড সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল।

নতুন এনটিটিএন লাইসেন্স : প্রায় ১০ বছর পর ২০১৯ সালে দেশে নতুন একটি বেসরকারি এনটিটিএন লাইসেন্স অনুমোদন দেয় সরকার।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সুপারিশে বৃহস্পতিবার বাহন লিমিটেড নামে নতুন বেসরকারি কোম্পানিকে এই  লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো অনেকদিন হতেই অনেকগুলো নতুন ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বা এনটিটিএনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এসএমপি কার্যকর : দেশের মোবাইল ফোন আপারেটরগুলোর কারও মনোপলি ব্যবসা ঠেকাতে প্রথমবারের মতো সিগনিফেকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালে।

এসএমপি রেগুলেশন অনুযায়ী বাজারে মোবাইল অপারেটরগুলোসহ এ খাতে লাইসেন্সধারী কোনো কোম্পানিকে এসএমপি ঘোষণায় তার গ্রাহক, রাজস্ব এবং স্পেকট্রামসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। যেখানে কোনো কোম্পানি যদি এর যেকোনো একটি মানদণ্ডে মোট বাজারের ৪০ শতাংশ দখল বা নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সে এসএমপি হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ হিসেবে বছরটির ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে নানা বিধিনিষেধ দেয়া হয়।

পর্নোসাইট বন্ধে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর যুদ্ধ : বছরের শুরুর দিকে পর্নোসাইট বন্ধে বেশ জোরেশোরে নামেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কয়েক দফায় প্রায় ২৫ হাজার পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করেন তিনি। এসব সাইট বন্ধ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাইবার সিকিউরিটির প্রকল্পকেও কাজে লাগান তিনি। পর্নো বন্ধের এই উদ্যোগ সারা দেশে বেশ আলোচিত হয়েছিল।