ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীকে হত্যার অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আফসানা ফেরদৌসী নামের এক ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত কর্মীর স্বজন ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা এ অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা ও ঠাকুরগাঁওয়ে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

আফসানার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কানিকশালগাঁওয়ে। তিনি ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপত্য বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মিরপুরের মানিকদি রোড এলাকার একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। ছয় মাস আগে তাঁর বাবা আখতার হোসেন মারা যান। এর মধ্যে আফসানার মৃত্যুতে পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

পরিবার ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে রবিনসহ তাঁর কয়েক বন্ধু আফসানাকে হত্যা করেছেন। আর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। আর কাফরুল থানার পুলিশও একই ধরনের কথা বলে মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আফসানাকে হত্যার অভিযোগ এনে ছাত্র ইউনিয়ন আজ বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেন, আফসানাকে হত্যার অভিযোগের বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চলছে। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আফসানা যদি আত্মহত্যায় করে থাকেন, তাহলে কার প্ররোচনায় এটা হলো, তা–ও তদন্ত করা উচিত। ওসির বক্তব্য ময়নাতদন্তকে প্রভাবিত করবে বলেও তাঁর অভিযোগ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

সমাবেশে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অন্তু চন্দ্র নাথ বলেন, আজ তাঁদের কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা-কর্মী বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে কলেজ থেকে বের হন। কলেজ ফটকে পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এতে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাঁরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

সমাবেশে আফসানার মামা তৌফিক ইলাহী বলেন, গত শনিবার রাত নয়টার দিকে মুঠোফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিনকে দুই ব্যক্তি জানান যে আফসানা আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর লাশ ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। খবর পেয়ে তাঁরা ওই হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে আফসানার লাশ পাননি তাঁরা। পরে মুঠোফোনে আরেক অপরিচিত ব্যক্তি জানান যে আফসানার লাশ মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে আছে। তখন তাঁরা ওই হাসপাতালে যান। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, কাফরুল থানায় লাশটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাফরুল থানায় গেলে পুলিশ জানায়, লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরে রাত তিনটার দিকে তাঁরা মর্গে গিয়ে আফসানার লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

নিহত আফসানার মামা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রবিনের সঙ্গে আফসানার বন্ধুত্ব ছিল। কিছুদিন আগে এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। এর জেরে রবিনসহ আরও কয়েকজন মিলে আফসানাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন বলে তাঁর দাবি। আর পুলিশ শুধু একটি অপমৃত্যু মামলা করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সমাবেশ শেষে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার আগামী শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রারও ঘোষণা দেন তিনি।

জানতে চাইলে কাফরুল থানার ওসি সিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, গত শনিবার রাতে মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় জানায় যে দুই ব্যক্তি এক মেয়ের লাশ রেখে পালিয়ে গেছে। পরে ওই লাশটি প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ‘কী ধরনের মামলা’—প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে রবিনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে আফসানাকে হত্যার অভিযোগ এনে আজ দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রুহিয়া চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

সূত্র: প্রথম আলো