চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে দুস্থদের চাল নিচ্ছে মেম্বার, ইউএনও ‘জানেন না কিছু’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা তার নিজের এবং পরিবারের অন্যদের নামে করিয়েছেন ভিজিডি ও ওএমএস এর কার্ড। জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১৫ মাস অন্য দুস্থদের চাল আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্যরা সহায়তা পাচ্ছেন চেয়ারম্যানের। আর এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান দৌলতপুর উপজেলা খাদ্য সহায়তা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪ নম্বর মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত (১, ২ ও ৩) নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা নিজ নামে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ইস্যুকৃত ভিজিডি কার্ডের অনুকূলে দেওয়া মাসিক ৩০ কেজি চাল তুলছেন।

তিনি নিজেই তা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম না থাকলেও আমার   ওপর চেয়ারম্যান সাহেবের একটু নেক নজর আছে তাই কোনো সমস্যা হয় না।

এদিকে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বৈরাগীরচর গ্রামের বাসিন্দা জামাল সরদারের (৬০) অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালে আমার নামে (ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড ইস্যু হয়। কিন্তু সে কার্ড আজও হাতে পাইনি। আমাকে জানানোও হয়নি এ কার্ড সম্পর্কে। কয়েক দিন আগে এলাকায় আর্মির লোক এসেছিল খাদ্য সহায়তা দিতে। তাই দেখে ভয়ে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা আমার বাড়ি এসে কার্ডটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু ওই কার্ডে তিন বছর ধরে টিপসই দিয়ে চাল তোলা হয়েছে। আমি ওই কার্ড নিতে চাইনি তবু শারমিন মেম্বার জোর বাড়িতে কার্ড রেখে যায়।

২ নম্বর ওয়ার্ড ভুরাপাড়া গ্রামের জিয়ারুলের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের অভিযোগ, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আমার নামে ভিজিডি কার্ড হলেও তা হাতে পাইনি। ১৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে আমার কার্ড থেকে। দুই বছর আগে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন। এ কার্ডের জন্য বহুদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরলেও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান আমার নামে কোনো কার্ড হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, এখানে নিয়ম অনিয়ম যা কিছুই হোক না কেন ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশেই হয়। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সব সদস্যই নিজ নামে বা পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ওএমএস ও ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে সরকারি চাল নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীন তার নিজের স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকট আত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও এমএসএর কার্ড করেছেন স্বীকার করে বলেন, এসব কার্ড যখন আসে তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দেন।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-আলমগীর বলেন, ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডির কার্ড করা যাবে কি না সেটা আমার জানা ছিল না। অনেক মেম্বারই না বুঝে এমনটি করেছে। তা ছাড়া নিয়ম না থাকলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব কার্ড অনুমোদন দিলেন কীভাবে?

দৌলতপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারীর নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার নিয়ম নেই। অসচ্ছল হলেও এটি আইনসম্মত নয়। এমন নিয়মবহির্ভূত কিছু হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানাও নেই বলারও নেই। আপনারা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। যদি কোনো অনিয়ম করে এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দেশব্যাপী সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফ, ভিজিডি ও ওএমএস প্রকল্পে সরকারি খাদ্য সহায়তার সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকৃত দুস্থরা সুবিধাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের মুখে সারা দেশে কর্মহীন হওয়াদের মধ্যে সৃষ্ট খাদ্য সংকটে এসব বিষয় সামনে চলে আসে। সূত্র: দেশ রুপান্তর